Source LINK Profile LINK
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরী পর্ব- ১
=============================================
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না, তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
আসসালামু আলাইকুম, সম্মানীত দ্বীনি ভাই - বোন একটু কষ্ট হলেও পুরো লেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়ে নিবেন
এবং পরবর্তী পর্ব গুলো ধারাবাহিক পড়বেন। তানাহলে সঠিক কথা জানতে পারবেন না।
ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা। যার সকল বিধান মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষে নির্ধারিত। ইসলামে শৈথিল্যতা ও চরমপন্থার কোনটার ই অবকাশ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানবজাতির উপরে সাক্ষী হ'তে পার এবং রাসুল তোমাদের উপর সাক্ষী হ'ন।
(সুরা বাক্বারাহঃ ২/১৪৩)
সাক্ষদাতা উম্মত সর্বদা মধ্যপন্থী হয়ে থাকে। আর এর মধ্যে নিহিত রয়েছে উম্মাহর "শ্রেষ্ঠ জাতি" হওয়ার চাবিকাটি। (সুরা আলে ইমরানঃ ১১০)
কিন্তু কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলকেই 'বড় ইবাদত' এবং 'সবচেয়ে বড় ফরয' বলে থাকে। যেভাবেই হৌক ক্ষমতা দখল তাদের মূল লক্ষয়। সেকারণ চরমপন্থাকে তারা অধিক পছন্দ করে। ক্ষমতা ও নেতৃত্ব আল্লাহ প্রদত্ত নে'মত। তা চেয়ে নেবার বা আদায় করে নেবার বিষয় নয়। এর মধ্যে প্রতারনা বা জবর্দস্তির কোন অবকাশ নেই। অথচ উক্ত কারণেই সরবত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে হানাহানি চলছে। এবিষয়ে ইসলামের নিজস্ব নীতি- আদর্শ ও রীতি পদ্ধতি রয়েছে।
বর্তমানে যেসব মুসলিম সরকার ইসলামী বিধান অনুযায়ী দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে না বা যেসব আদালত তদনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করেনা, তাদেরকে 'কাফের' আখ্যায়িত করে তাদের হত্যা করার পক্ষে নিম্নের আয়েয়াতটিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যেমন আল্লাহ বলেন, " যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনযায়ী বিচার বা শাসন করে না, তারা কাফের" (সুরা মায়েদাহঃ ৫/৪৪). এর পরের ৪৫ আয়েয়াতে রয়েছে 'তারা যালেম' এবং ৪৭ আয়েয়াতে রয়েছে 'তারা ফাসেক।' এক ই অপরাধের তিন রকম পরিণতিঃ কাফের, যালেম ও ফাসেক।
এখানে 'কাফের' ইসলাম থেকে খারিজ প্রকৃত 'কাফের' বা মুরতাদ নয়। বরং এর অর্থ আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতাকারী কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি। কিন্তু চরমপন্থীরা এ আয়েয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলিম সরকারকে প্রকৃত 'কাফের' আখ্যায়িত করে এবং তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নামতে তরুনদের প্ররোচিত করে।
বিগত যুগে এই আয়েয়াতের অপব্যাখ্যা করে চরমপন্থী ভ্রান্ত ফের্কা খারেজীরা চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ) -কে 'কাফের' আখ্যায়িত করে তাঁকে হত্যা করেছিল। আজ ও ঐ ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারীরা বিভিন্ন দেশের মুসলিম বা অমুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্বব্যাপী ইসলামের শান্তিময় ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করছে।
সম্ভবতঃ একারণেই রাসুল(সাঃ) খারেজীদেরকে "জাহান্নামের কুকুর বলেছেন"
(ইবনু মাজাহ হা/ ১৭৩, সনদ সহীহ)
"মানাবী বলেন, এর কারণ হ'ল তারা ইবাদতে অগ্রগামী। কিন্তু অন্তরসমূহ বক্রতায় পূর্ণ। এরা মুসলমানদের কোন বড় পাপ দেখলে তাকে 'কাফের' বলে ও তার রক্ত হালাল জ্ঞান করে। যেহেতু এরা আল্লাহর বান্দাদের প্রতি কুকুরের মত আগ্রাসী হয়, তাই তাদের কৃতকর্মের দরুণ জাহান্নামে প্রবেশকালে তারা কুকুরের মত আকৃতি লাভ করবে।"
(মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর শরহ সহীহুল জামে' আস- সাগীর, বৈরুতঃ ১ম সংস্করণ, ১৪১৫/ ১৯৯৪; ৩/ ৫০৯ পৃ)
"আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর(রাঃ) এদেরকে "আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি" মনে করতেন। কেননা তারা কাফিরদের উদ্দেশ্যে বর্ণিত আয়েয়াতগুলিকে মুসলিমদের উপরে প্রয়োগ করে থাকে।"
(ফাৎহুল বারী, ৮৮ অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ- এর তরজমানুল বাব, হা/ ৬৯৩০- এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
বস্তুতঃ উক্ত আয়েয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সেটাই, যা সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। যেমন-
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস(রাঃ) উক্ত আয়েয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করল সে কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি তা স্বীকার করল, কিন্তু সে অনুযায়ী বিচার করল না সে যালিম ও ফাসিক।
(ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাসীর, উক্ত আয়েয়াতের তাফসীর দর্ষটব্য; তাহকীক দ্রষ্টব্যঃ খালেদ আল- আম্বারী, উসূলুত তাফসীর, পৃঃ ৬৪; ৭৫- ৭৬ টীকাসমূহ)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, "তোমরা এ কুফরী দ্বারা যে অর্থ বুঝাতে চাচ্ছ, সেটা নয়। কেননা এটি ঐ কুফরী নয়, যা কোন মুসলমানকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। বরং এর দ্বারা বড় কুফরের নিম্নের কুফর, বড় যুলুমের নিম্নের যুলুম ও বড় ফিসকের নিম্নের ফিসক বুঝানো হয়েছে।
(হাকেম, হা/ ৩২১৯, ২/ ৩১৩, সনদ সহীহ; তিরমিযী, হা/ ২৬৩৫)
(২) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ(রাঃ) ও হাসান বাসরী(রহঃ) বলেন, এটা মুসলিম, ইহূদী, কাফের সকল প্রকার লোকের জন্য সাধারণ হুকুম যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসগতভাবে (আল্লাহর বিধানকে) প্রত্যাখ্যান করে এবং অন্য বিধান দ্বারা বিচার ও শাসন করাকে হালাল বা বৈধ মনে করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উক্ত কাজ করে, অথচ বিশ্বাস করে যে সে হারাম কাজ করছে, সে ব্যক্তি মুসলিম ফাসেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার বিষয়ট আল্লাহর উপর ন্যস্ত। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে ক্ষমা করবেন।
(কুরতুবী, সুরা মায়েদাহ ৪৪ নং আয়েয়াতের তাফসীর)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব
==================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ২
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোন, আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছি তা হ'ল সুরা মায়েদাহ এর ৪৪ নং আয়েয়াতকে চরমপন্থী দের অপব্যাখ্যা। দয়া করে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন। পরবর্তী পর্ব গুলো ধারাবাহিক পড়বেন।
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফের। (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
(৩) তাবেঈ বিদ্বান ইকরিমা, মুজাহিদ, আত্বা ও তাঊসসহ বিগত ও পরবর্তী যুগের আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের সকলে কাছাকাছি এক ই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
(সালাফ ও খালাফের ৩৯ জন বিদ্বানের ফাতওয়া দ্রষ্টব্য; উছূলুত তাকফীর, ৬৪- ৭৪ পৃঃ)
এটাই হ'ল সাহাবী ও তাবেঈগণের ব্যাখ্যা। যারা হলেন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম ও কুফর সম্পর্কে উম্মতের সেরা বিদ্বান ও সেরা বিজ্ঞ ব্যক্তি।
পরবর্তীরা এ ব্যাপারে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল চরমপন্থী। যারা কবীরা গোনাহগার মুমিনকে কাফের বলে ও তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী গণ্য করে এবং তার রক্ত হালাল মনে করে। এরা হ'ল প্রথম যুগের ভ্রান্ত ফের্কা "খারেজী" ও পরবর্তী যুগে তাদের অনুসারী হঠকারী লোকেরা। আরেক দল এ ব্যাপারে চরম শৈতিল্যবাদ প্রদর্শন করে এবং কেবল হৃদয়ে বিশ্বাস অথবা মুখে স্বীকৃতিকেই পূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করে। বস্তুতঃ এই দলের লোকসংখ্যাই সর্বদা বেশী। এরা পূর্ববর্তী ভ্রান্ত ফের্কা "মুর্জিয়া" দলের অনুসারী। দু'টি দল ই বাড়াবাড়ির দুই প্রান্তসীমায় অবস্থান করেছে।
(৪) আব্বাসীয় খলীফা মামূন (১৯৮- ২১৮ হিঃ) -এর দরবারে জনৈক "খারেজী" এলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কোন বস্তু তোমাদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে? জবাবে সে বলল, আল্লাহর কিতাবের একটি আয়েয়াত। তিনি বললেন, সেটি কোন আয়েয়াত? সে বলল, সুরা মায়েদাহ ৪৪ আয়েয়াত। খলীফা বললেন, তুমি কি জানো এটি আল্লাহর নাযিলকৃত? সে বলল জানি। খলীফা বললেন, এ বিষয়ে তোমার প্রমাণ কি? সে বলল, উম্মতের ঐক্যমত(ইজমা). তখন খলীফা তাকে বললেন, তুমি যেমন আয়েয়াত নাযিলের ব্যাপারে ইজমার উপরে খুশী হয়েছ, তেমনি উক্ত আয়েয়াতের ব্যাখ্যায় ও উম্মতের ইজমার উপরে সন্তুষ্ট হও। সে বলল, আপনি সঠিক কথা বলেছেন। অতঃপর সে খলীফাকে সালাম দিয়ে বিদায় হ'ল।
(খত্বীব, তারীখু বাগদাদ, ১০/ ১৮৬; যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ১০/২৮০)
(৫) সঊদী আরবের সাবেক প্রদান মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন বা বিচার করে না, সে ব্যক্তি চারটি বিষয় থেকে মুক্ত নয়ঃ (১) তার বিশ্বাস মতে মানুষের মনগড়া আইন আল্লাহর আইনের চাইতে উত্তম। অথবা (২) সেটি শার ঈ বিধানের ন্যায়। অথবা (৩) শার ঈ বিধান উত্তম, তবে এটা ও জায়েয। এরুপ বিশ্বাস থাকলে সে কাফির এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু (৪) যদি সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য কোন বিধান বৈধ নয়। তবে সে অলসতা বা উদাসীনতা বশে বা পরিস্থিতির চাপে এটা করে, তা'হলে সেটা ছোট কুফরী হবে ও সে কবীরা গোনাহগার হবে। কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হবে না।
(খালেদ আল- আম্বারী, উছূলুত তাকফীর, ৭১-৭২ পৃঃ)
যেমন হাবশার (ইথি ও পিয়া) বাদশাহ নাজাশী ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং সে মর্মে রাসুল(সাঃ)- এর প্রেরিত দূতের নিকট তিনি বায়'আত নিয়েছিলেন ও পত্র প্রেরন করেছিলেন। কিন্তু দেশের নাগরিকগণ খ্রিষ্টান হওয়ায় তিনি নিজ দেশে ইসলামী বিধান চালু করতে পারেননি। এজন্য তিনি দায়ী ছিলেন না। বরং পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিল। সেকারণ ৯ম হিজরীতে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাসুল(সাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে তার গায়েবানা জানাযা পড়েন। কারণ অমুসলিম দেশে তাঁর জানাযা হয়নি।[আবুদাউদ, হা/৩২০৪ "জানায়েয অধ্যায় ৬২ অনুচ্ছেদ]
(আর- রাহীকুল মাখতূম, ৩৫২ পৃঃ মুত্তাফাক্ব 'আলাইহ , মিশকাত, হা/ ১৬৫২ "জানায়েয অধ্যায়)
(৬) শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, কুফর, যুলুম, ফিসক সবগুলি ই বড় ও ছোট দু'প্রকারের। যদি কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা না করে, সূদী লেন-দেন, যেনা- ব্যভিচার বা অনুরুপ স্পস্ট হারামগুলিকে হালাল জ্ঞান করে, সে বড় কাফের, যালেম, ও ফাসেক হবে। আর বৈধ জ্ঞান না করে পাপ করলে সে ছোট কাফের, যালেম ও ফাসেক ও মহা পাপী হবে।
(উছূলুত তাকফীর, ৭৪ পৃঃ) যা তওবা ব্যতীত মাফ হবে না।
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব
=============================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৩
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফের।"(সুরা মায়েদাহ, ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন গত পর্ব-১ ও পর্ব- ২ এর পর পর্ব- ৩ এর মধ্যে আমরা আলোচনা করবো ইনশাহ আল্লাহ। কাফের বলার দলীল হিসাবে আরও কয়েকটি আয়েয়াতঃ
সুরা মায়েদাহ ৪৪ আয়েয়াতটি ছাড়াও আরও কয়েকটি আয়েয়াতকে মুসলমানকে কাফের বলার পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। যেমনঃ সুরা নিসা ৬৫, তওবা ৩১, শুরা ২১, ও আন'আম ১২১ প্রভৃতি।
(১) সুরা নিসা ৬৫. আল্লাহ বলেন,
(অত এব তোমার পালনকর্তার সপথ ! তারা কখনো মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়সালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়সলার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরুপ দ্বিধা- সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে).
সাইয়িদ কুতুব অত্র আয়েয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন 'তাগূতের অনুসারী ঐসব লোকেরা 'ঈমানের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যাবে। মুখে তারা যত ই দাবী করুক না কেন।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, ২/ ৮৯৫)
অথচ "তারা মুমিন হতে পারবে না" এর প্রকৃত অর্থ হবে, "তারা পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না" কারণ উক্ত আয়েয়াত নাযিল হয়েছিল দু'জন মুহাজির ও আনসার সাহাবীর পরস্পরের জমিতে পানি সেচ নিয়ে ঝগড়া মিমাংসার উদ্দেশ্যে।
(বুখারী, হা/ ২৩৫৯; মুসলিম, হা/ ২৩৫৭ ও অন্যান্য)
দু'জন ই ছিলেন বদরী সাহাবী এবং দু'জন ই ছিলেন স্ব স্ব জীবদ্দশায় ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। অত এব তাদের কাউকে মুনাফিক বা কাফির বলার উপায় নেই। কিন্তু চরমপন্থী খারেজী ও শী'আপন্থী মুফাসসিরগণ তাদের কাফের বলায় প্রশান্তি বোধ করে থাকেন। তারা আয়েয়াতের প্রকাশ্য অর্থ নিয়েছেন ও সকল কবীরা গোনাহগারকে "কাফের" সাব্যস্ত করেছেন। অথচ তারা আরবীয় বাকরীতি এবং হাদীসের প্রতি লক্ষ করেননি।
যেমন রাসুল(সাঃ) বলেন, "আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় ( ৩ বার), যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টকারীতা হতে নিরাপদ নয়।"
(বুখারী, হা/৬০১৬; মুসলিম, মিশকাত, হা/ ৪৯৬২ "শিষ্টাচার" অধ্যায়, ১৫ অনুচ্ছেদ)
তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটা ভালবাসবে যা সে তার নিজের জন্য ভালবাসে।
(বুখারী,মুসলিম হা/৪৫; মিশকাত, হা/ ৪৯৬১)
এসব হাদীসের অর্থ ঐ বক্তি ঈমানহীন "কাফের" নয়, বরং পূর্ণ মুমিন নয়। এক ই ভাবে কবীরা গোনাহগার মুমিন "কাফের" হবে না বরং সে 'পূর্ণ মুমিন হবে না।
(২) সুরা তওবাঃ ৩১. আল্লাহ বলেন,
(তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম-উলামা ও পোপ- পাদ্রীদের এবং মারিয়াম পুত্র মাসীহ ঈসাকে "রব" হিসাবে গ্রহন করেছে। অথচ তাদের প্রতি কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধু মাত্র এক উপাস্যের ইবাদত করবে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে, তিনি সে সব থেকে পবিত্র।)
অত্র আয়েয়াতের তাফসীরে সাইয়িদ কুতুব বলেছেন, "এরা মুশরীক এবং তা ঐ শিরক, যা তাদেরকে মুমিনদের গন্ডী থেকে বের করে কাফিরদের গন্ডীতে প্রবেশ করাবে।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, ৩/১৬৬২)
অথচ এর ব্যাখ্যায় সকল মুফাসসির বলেছেন যে, তারা তাদেরকে প্রকৃত "রব" ভাবত না। বরং তাদের অন্যায় আদেশ- নিষেধসমূহ মান্য করত।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) ও যাহহাক বলেন, ইহূদী- নাছারাদের সমাজ ও ধর্মনেতাগণ তাদেরকে সিজদা করার জন্য বলেননি। বরং তারা আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজে লোকদের হুকুম দিতেন এবং তারা তা মান্য করত। আর সেজন্য ই আল্লাহ পাক ঐসব আলেম, সমাজনেতা ও দরবেশগণকে "রব" হিসাবে অভিহিত করেছেন।
(তাফসীর ইবনু জারীর, [বৈরুত ছাপাঃ ১৯৮৬] ১০/ ৮০-৮১ পৃঃ)
হুযায়ফা(রাঃ) ও অনুরুপ বলেন। (তাফসীর কুরতুবী)
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ(রহঃ) বলেন, যদি কেউ আক্বীদাগত ভাবে হারামকে হালাল করায় বিশ্বাসী হয়, তবে সে কাফের হবে। কিন্তু যদি আক্বীদাগতভাবে এতে বিশ্বাসী না হয়। কিন্তু গোনাহের আনুগত্য করে, তবে সে কবীরা গোনাহগার হবে। এমনকি হারামকে হালালকারী যদি মুজতাহিদ হয় এবং তার কাছে উক্ত বিষয়ে সত্য অস্পষ্ট থাকে এবং সে আল্লাহকে সাধ্যমত ভয় করে, তবে সে ব্যক্তি তার গোনাহের জন্য আল্লাহর নিকট পাকড়াও হবে না। তিনি বলেন, কুর আন ও হাদীসে বহু গোনাহের ক্ষেত্রে এরুপ কুফর ও শিরকের শব্দ বর্ণিত হয়েছে।
(ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ঈমান [বৈরুতঃ আল- মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৮/১৯৮৮] পৃঃ৬৭,৬৯)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৪
" যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা, তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন বিগত ১,২, ও ৩ পর্বে আমরা দেখেছি যে চরমপন্থী বা খারেজী মতবাদে বিশ্বাসী যারা তারা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিদ্বানগণের সঠিক ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে তারা নিজের মতো করে বুঝার কারণে মুসলিমদের কবীরা গোনাহ দেখলেই কাফির বলে তাদের হত্যা করা জায়েয মনে করে। আসুন আজ আরো কিছু আয়েয়াত জেনে নেই যেসব আয়েয়াত দিয়ে তারা মুসলিমদের কাফির মনে করে।
(৩) সুরাঃ শুরাঃ ২১. আল্লাহ বলেন,
"তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে যারা তাদের জন্য দ্বীনের কিছু বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি? ক্বিয়ামতের দিন তাদের বিষয়ে ফায়সালার সিদ্ধান্ত না থাকলে এখুনি তাদের নিস্পত্তি হয়ে যেত। নিশ্চয় ই যালেমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
(সুরা শূরাঃ ৪২/২১)
উক্ত আয়েয়াতে একথা বর্ণিত হয়েছে যে, আইন প্রণয়ণের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। যার কোন শরীক নেই। এক্ষণে যদি কেউ তাতে ভাগ বসায় এবং নিজেরা আইন রচনা করে, তাহ'লে সে মুশরিক হবে। শিরকের উক্ত প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করেছেন খারেজী আক্বীদার অনুসারী মুফাসসিরগণ। ফলে যেসব মুসলিম সরকার কোন একটি আইনও রচনা করেছে, যা আল্লাহর আইনের অনুকূলে নয়, তাদেরকে তারা মুশরিক ও মুরতাদ ধারণা করেছেন এবং তাদেরকে হত্যা করা সিদ্ধ মনে করেছেন। অথচ পূর্বের আয়েয়াতগুলির ন্যায় এ আয়েয়াতের অর্থ তারা প্রকৃত মুশরিক নয়, বরং কবীরা গোনাহগার। কেননা এর প্রকৃত অর্থ আল্লাহর ইবাদতে শরীক করা নয়। বরং জিন ও ইনসানরুপী শয়তানরা হালাল ও হারামের যেসব বিধান রচনা করে, সে সবের অনুসরণ করা। কোন সরকার এগুলি করলে এবং আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে সেটাকে উত্তম, সমান অথবা সিদ্ধ মনে করলে ঐ সরকার সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হবে। কিন্তু তা মনে না করলে সে কবীরা গোনাহগার হবে। ইবনু জারীর, ইবনু কাছিরসহ আহলে সুন্নাতের সকল বিদ্বান এরুপ তাফসীর করেছেন।
(৪) সুরাঃ আন'আমঃ ১২১. আল্লাহ বলেন,
"যেসব পশু জবেহকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তা তোমরা ভক্ষণ করো না। নিশ্চয় ই সেটি ফাসেকী কাজ। শয়তানেরা তাদের বন্ধুদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। এক্ষণে যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহ'লে তোমরা অবশ্য ই মুশরিক হয়ে যাবে।
(সুরা আন'আমঃ ৬/১২১)
এখানেও পূর্বের ন্যায় প্রকাশ্য অর্থে মুশরিক ও কাফির অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন সাইয়িদ কুতুব বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোট একটি প্রশাখাগত বিষয়েও মানুষের রচিত আইনের অনুসরণ করবে, ঐ ব্যক্তি নিঃসন্দেহে "মুশরিক" হবে। যদি ও সে আসলে "মুসলমান". অতঃপর তার কাজ তাকে ইসলাম থেকে শিরকের দিকে তাকে বের করে নিয়ে গেছে। যদি ও সে মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এর সাক্ষ দান অব্যাহত রাখে। কেননা ইতিমধ্যেই সে আল্লাহ ব্যতীত আন্যের সাথে মিলিত হয়েছে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের আনুগত্য করেছে।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, আন'আম ১২১ আয়েয়াতে তাফসীর, ৩/১১৯৮ পৃঃ)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব।
===================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৫
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোন বিগত পর্ব গুলির ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো "প্রকাশ্য কুফরী" এর ব্যাখ্যা ও "কাফের গণ্য করার ফলাফল" ও "মানুষ হত্যার পরিণাম" নিয়ে।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, সুস্পষ্ট কুফরী না দেখা পর্যন্ত শাসকের আনুগত্যমুক্ত হয়ো না।
(বুখারী, মুসলিম; মিশকাত, হা/ ৩৬৬৬.
কেবল ধারণা ও প্রচারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে না। কেবল ফাসেকী বা কোন কবীরা গোনাহ যথেষ্ট নয়। বরং ইসলামকে পুরোপুরি অস্বীকার করা বুঝাবে। যাতে কোনরুপ অস্পষ্টতা বা গোপনীয়তা থাকে না। জ্ঞানীদের নিকট তার কুফরীর ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত কুর আন ও সুন্নাহর মযবুত দলীল থাকতে হবে। কোন দুর্বল প্রমান বা সন্দেহের ভিত্তিতে নয় কিংবা কোন দল বা ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে নয়। বরং কাউকে কাফের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার থাকবে রাষ্ট্রীয় ইসলামী আদালতের শরী'আত অভিজ্ঞ বিচারকমন্ডলীর অথবা দেশের হাদীসপন্থী বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। অন্য কার সিদ্ধান্তে নয়।
কেননা রাসুল(সাঃ) বলেন, "যদি কেউ তার ভাইকে বলে হে কাফের! তাহলে সেটা তাদের যেকোন একজনের উপর বর্তাবে।
(বুখারী, হা/ ৬১০৪; মুসলিম, হা/ ৬০; মিশকাত, হা/ ৪৮১৫)
এর দ্বারা ছোট কুফরী বুঝানো হয়েছে। কেননা কেউ কাউকে কাফের বললেই কাফের হয়ে যায় না। বরং কুর আন ও সুন্নাহর স্পষ্ট দলীলের ভিত্তিতে যাচাই সাপেক্ষে কুফরী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে এবং বারবার বুঝানো সত্ত্বেও স্বীয় অবিশ্বাসে অটল থাকলে তাকে "প্রকাশ্য কুফরী" হিসাবে গণ্য করা যাবে। কোন মুসলিম সরকারের বেলায় ও এক ই কথা প্রযোজ্য।
তবে কাফের সাব্যস্ত হলে উক্ত শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয, তা নয়। কারণ যুদ্ধ করার বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ। আর তা হ'ল বৈধ কর্তৃপক্ষ, অনুকূল পরিবেশ এবং যথার্থ শক্তি ও পর্যাপ্ত সামর্থ থাকা।
আল্লাহ বলেন, "তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর"(সুরা তাগাবুন ৬৪/১৬)
তিনি বলেন, "আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করেন না" (সুরা বাক্বারাহ, ২/২৮৬)
অন্যথায় তা আত্মহননের শামিল হবে। যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
যেমন তিনি বলেন, "তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।" (সুরা বাক্বারাহ, ২/১৯৫)
কাফের গণ্য করার ফলাফলঃ
উল্লেখ্য যে, কাফির ঘোষণা করা কেবল সরকারের বিরুদ্ধে নয়, যে কোন মুসলিমের বিরুদ্ধেও হতে পারে। আর কাফির গণ্য করে তাদের রক্ত ও ধন-সম্পদ যদি হালাল করা হয়, তাহলে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন বাপকে কাফের গণ্য করা হলে মায়ের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। সন্তান পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি তার জন্য পিতার রক্ত হালাল হবে। এক ই অবস্থা হবে ভাই ভাইয়ের ক্ষেত্রে, স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য আত্মীয়- স্বজনের ক্ষেত্রে। আর যদি এটা যদি কোন সরকারের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে সেটা আরো কঠিন হবে এবং সারা দেশে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। নিরপরাধ নারী- শিশু ও সাধারণ নির্দোষ মানুষ সরকারী জেল-যুলুম ও নির্যাতনের অসহায় শিকারে পরিণত হবে, যা আজকাল বিভিন্ন দেশে হচ্ছে।
কিছু লোক বোমা মেরে দ্বীন কায়েম করতে চায়। তারা অমুসলিমের চাইতে মুসলিম নেতাদের হত্যা করাকে বেশী অগ্রাধিকার দেয়। তাদের যুক্তি "মাছি অতক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ দুর্গন্ধ থাকবে।" অথচ শয়তান যেহেতু আছে, দুর্গন্ধ থাকবেই, মাছি ও থাকবে।
তবে মুমিন- কাফির যে-ই হৌক নিরস্ত্র নিরপরাধ কোন মানুষকে হত্যা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামী আদালত বা দায়ীত্বশীল বৈধ কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যাযোগ্য আসামী সাব্যস্ত করতে পারে না। অথচ স্বেচ্ছাচারী কিছু চরমপন্থীর জন্য আজ নির্দোষ মুসলিম নর-নারী নিজ দেশে ও প্রবাসে ধিকৃত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
মানুষ হত্যার পরিণামঃ
আল্লাহ বলেন, "যে কেউ জীবনের বদলে জীবন অথবা জনপদে অনর্থ সৃষ্টি করা ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে।" (সুরা মায়েদাহঃ ৫/৩২)
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, "যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত তাঁর কসম করে বলছি, একজন মুমিনকে হত্যা করা অবশ্য ই আল্লাহর নিকটে দুনিয়া লয় হয়ে যাওয়ার চাইতে অধিক ভয়ংকর।"
(নাসা ঈ, হা/ ৩৯৮৬; আলবানী, ছীহুল জামে' হা/৪৩৬১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, "একজন মুসলিম হত্যা করার চাইতে দুনিয়া লয় হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অধিক হালকা বিষয়।" (নাসা ঈ, হা/ ৩৯৮৭; তিরমিযী, হা/ ১৩৯৫; মিশকাত, হা/ ৩৪৬২; ক্বিসাস অধ্যায়)
এর অর্থ এটা নয় যে, কাফেরকে হত্যা করায় নেকী আছে। সেটা হলে রাসুল(সাঃ) শীর্ষ কাফের নেতা আবু সুফিয়ানকে মক্কা বিজয়ের আগের রাতে নিরস্ত্র অবস্থায় ধরা পড়ার পরেও তাকে কেন হত্যা করেননি? বরং তিনি তাকে মুসলিম হওয়ার সুযোগ দেন। পরদিন মক্কা বিজয়ের পর প্রদত্ত ভাষণে তিনি সকল কাফির- মুশরিকদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং রক্তপাতকে স্থায়ীভাবে হারাম করে দেন।
(সীরাতে ইবনে হিশাম, ২/ ৪০৩, ৪১৫; সফীউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, ৪০৫, ৪০৭ পৃঃ বুখারী, হা/ ১০৪; মুত্তাফাক্ব 'আলাইহ, মিশকাত, হা/ ২৭২৬)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
====================================
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন আমরা বিগত পর্ব গুলোর ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো "কবীরা গোনাহগার কাফের নয়" এবং "মুসলিম-এর নিদর্শন" ও " উত্তরনের পথ".
কবীরা গোনাহগার কাফের নয়ঃ
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, "মুমিন থাকা অবস্থায় কোন ব্যভিচারী ব্যভিচার করতে পারে না, কোন চোর
চুরি করতে পারে না, কোন মদ্যপ মদ্যপান করতে পারে না, কোন ডাকাত ডাকাতি করতে পারে না, কেউ গণীমতের মালে খেয়ানত করতে পারে না। অত এব তোমরা সাবধাণ হও! তোমরা সাবধাণ হও! ঈবনু আব্বাস-এর বর্ণনায় আরও এসেছে, 'মুমিন থাকা অবস্থায় হত্যাকারী কাউকে হত্যা করতে পারে না। এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস(রাঃ) দুই হাতের আঙ্গুলগুলি পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে অতঃপর বের করে নিয়ে বলেন, যখন সে তওবা করে, তখন ঈমান তার মধ্যে আবার প্রবেশ করে। ইমাম বুখারী(রহঃ) অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে 'মুমিন' অর্থ 'পূর্ণ মুমিন। পাপ কাজের সময় ঈমানের নূর তার অন্তর থেকে বেরিয়ে যায়।'
(বুখারী, নুসলিম, মিশকাত, হা/ ৫৩)
আর মুসলমান পরস্পরে যুদ্ধ করলেও তারা যে কাফের ও মুরতাদ হয় না, তার বড় প্রমাণ হ'ল সুরা হুজুরাত ৯ আয়েয়াতটি। যেখানে আল্লাহ পরস্পরে যুদ্ধরত উভয়পক্ষকে 'মুমিন' বলে অভিহিত করেছেন।
মুসলিম-এর নিদর্শনঃ
এক্ষনে মুসলিম কে? সে বিষয়ে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। আর যে ব্যক্তি আমাদের ক্বিবলাকে ক্বিবলা মানে, আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের যবহকৃত প্রাণীর গোশত খায়, সে 'মুসলিম।' তার জন্য সেই পুরস্কার, যা অন্য মুসলমানদের জন্য রয়েছে এবং তার উপরে সেই শাস্তি, যা অন্য মুসলমানদের উপরে প্রযোজ্য।
(নাসাঈ, হা/ ৩৯৬৮; বুখারী, মিশকাত, হা/১৩)
উত্তরণের পথঃ
মুসলিম সমাজে কারু মধ্যে "প্রকাশ্য কুফরী" দেখা গেলে প্রথমে তাকে উপদেশের মধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। অতঃপর বারবার চেষ্টা সত্বেও না পারলে ঐ ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলবে এবং তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দো'আ করবে। যদি সরকার অমুসলিম হয় ও ইসলামের বাধা সৃষ্টি করে অথবা মুসলিম সরকারের মধ্যে "প্রকাশ্য কুফরী" দেখা দেয় এবং ইসলামের সাথে দুশমনী করে, তাহলে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকলে বৈধ পন্থায় সেটা করবে। ন ইলে সবর করবে এবং আমল বিল মা'রুফ ও নাহি 'আনিল মুনকারের মূলনীতি অনুসরণে ইসলামের পক্ষে জনম গঠন করবে। এটাই নবীগণের তরীকা।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আত্মশুদ্ধি ও পরিচর্যার মাধ্যমে সমাজশুদ্ধির কাজ করেছেন। আমাদেরকেও সেপথে এগোতে হবে। বাধা এলে তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন। পরে সক্ষমতা অর্জন করলে এবং আক্রান্ত হ'লে জিহাদ করেছেন কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে, কোন মুসলিম বা মুনাফিকের বিরুদ্ধে নয়। আমরা যদি ইসলামের অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ চাই, তাহ'লে আমাদেরকে রাসুল(সাঃ) -এর পথে চলতে হবে, অন্য পথে নয়।
কবি আবু ওসমান সাঈদ বিন ইসমাঈল (২৩০- ২৯৮ হিঃ) বলেন,
"তোমার দ্বীনের অবস্থা কি যে তুমি তাকে ময়লাযুক্ত করার উপর খুশি হয়ে গেছ? আর তোমার পোষাক ময়লা দিয়ে ধৌত করা হয়েছে'? তুমি নাজাত চাও অথচ তুমি সে পথে চলোনা। নিশ্চয় ই নৌকা কখনো শুকনা মাটিতে চলে না।"
(বায়হাক্বী শু'বা, ১২ অধ্যায় ২/ ৩২৯ পৃঃ)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরী পর্ব- ১
=============================================
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না, তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
আসসালামু আলাইকুম, সম্মানীত দ্বীনি ভাই - বোন একটু কষ্ট হলেও পুরো লেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়ে নিবেন
এবং পরবর্তী পর্ব গুলো ধারাবাহিক পড়বেন। তানাহলে সঠিক কথা জানতে পারবেন না।
ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা। যার সকল বিধান মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষে নির্ধারিত। ইসলামে শৈথিল্যতা ও চরমপন্থার কোনটার ই অবকাশ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানবজাতির উপরে সাক্ষী হ'তে পার এবং রাসুল তোমাদের উপর সাক্ষী হ'ন।
(সুরা বাক্বারাহঃ ২/১৪৩)
সাক্ষদাতা উম্মত সর্বদা মধ্যপন্থী হয়ে থাকে। আর এর মধ্যে নিহিত রয়েছে উম্মাহর "শ্রেষ্ঠ জাতি" হওয়ার চাবিকাটি। (সুরা আলে ইমরানঃ ১১০)
কিন্তু কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলকেই 'বড় ইবাদত' এবং 'সবচেয়ে বড় ফরয' বলে থাকে। যেভাবেই হৌক ক্ষমতা দখল তাদের মূল লক্ষয়। সেকারণ চরমপন্থাকে তারা অধিক পছন্দ করে। ক্ষমতা ও নেতৃত্ব আল্লাহ প্রদত্ত নে'মত। তা চেয়ে নেবার বা আদায় করে নেবার বিষয় নয়। এর মধ্যে প্রতারনা বা জবর্দস্তির কোন অবকাশ নেই। অথচ উক্ত কারণেই সরবত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে হানাহানি চলছে। এবিষয়ে ইসলামের নিজস্ব নীতি- আদর্শ ও রীতি পদ্ধতি রয়েছে।
বর্তমানে যেসব মুসলিম সরকার ইসলামী বিধান অনুযায়ী দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে না বা যেসব আদালত তদনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করেনা, তাদেরকে 'কাফের' আখ্যায়িত করে তাদের হত্যা করার পক্ষে নিম্নের আয়েয়াতটিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যেমন আল্লাহ বলেন, " যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনযায়ী বিচার বা শাসন করে না, তারা কাফের" (সুরা মায়েদাহঃ ৫/৪৪). এর পরের ৪৫ আয়েয়াতে রয়েছে 'তারা যালেম' এবং ৪৭ আয়েয়াতে রয়েছে 'তারা ফাসেক।' এক ই অপরাধের তিন রকম পরিণতিঃ কাফের, যালেম ও ফাসেক।
এখানে 'কাফের' ইসলাম থেকে খারিজ প্রকৃত 'কাফের' বা মুরতাদ নয়। বরং এর অর্থ আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতাকারী কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি। কিন্তু চরমপন্থীরা এ আয়েয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলিম সরকারকে প্রকৃত 'কাফের' আখ্যায়িত করে এবং তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নামতে তরুনদের প্ররোচিত করে।
বিগত যুগে এই আয়েয়াতের অপব্যাখ্যা করে চরমপন্থী ভ্রান্ত ফের্কা খারেজীরা চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ) -কে 'কাফের' আখ্যায়িত করে তাঁকে হত্যা করেছিল। আজ ও ঐ ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারীরা বিভিন্ন দেশের মুসলিম বা অমুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্বব্যাপী ইসলামের শান্তিময় ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করছে।
সম্ভবতঃ একারণেই রাসুল(সাঃ) খারেজীদেরকে "জাহান্নামের কুকুর বলেছেন"
(ইবনু মাজাহ হা/ ১৭৩, সনদ সহীহ)
"মানাবী বলেন, এর কারণ হ'ল তারা ইবাদতে অগ্রগামী। কিন্তু অন্তরসমূহ বক্রতায় পূর্ণ। এরা মুসলমানদের কোন বড় পাপ দেখলে তাকে 'কাফের' বলে ও তার রক্ত হালাল জ্ঞান করে। যেহেতু এরা আল্লাহর বান্দাদের প্রতি কুকুরের মত আগ্রাসী হয়, তাই তাদের কৃতকর্মের দরুণ জাহান্নামে প্রবেশকালে তারা কুকুরের মত আকৃতি লাভ করবে।"
(মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর শরহ সহীহুল জামে' আস- সাগীর, বৈরুতঃ ১ম সংস্করণ, ১৪১৫/ ১৯৯৪; ৩/ ৫০৯ পৃ)
"আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর(রাঃ) এদেরকে "আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি" মনে করতেন। কেননা তারা কাফিরদের উদ্দেশ্যে বর্ণিত আয়েয়াতগুলিকে মুসলিমদের উপরে প্রয়োগ করে থাকে।"
(ফাৎহুল বারী, ৮৮ অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ- এর তরজমানুল বাব, হা/ ৬৯৩০- এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
বস্তুতঃ উক্ত আয়েয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সেটাই, যা সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। যেমন-
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস(রাঃ) উক্ত আয়েয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করল সে কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি তা স্বীকার করল, কিন্তু সে অনুযায়ী বিচার করল না সে যালিম ও ফাসিক।
(ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাসীর, উক্ত আয়েয়াতের তাফসীর দর্ষটব্য; তাহকীক দ্রষ্টব্যঃ খালেদ আল- আম্বারী, উসূলুত তাফসীর, পৃঃ ৬৪; ৭৫- ৭৬ টীকাসমূহ)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, "তোমরা এ কুফরী দ্বারা যে অর্থ বুঝাতে চাচ্ছ, সেটা নয়। কেননা এটি ঐ কুফরী নয়, যা কোন মুসলমানকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। বরং এর দ্বারা বড় কুফরের নিম্নের কুফর, বড় যুলুমের নিম্নের যুলুম ও বড় ফিসকের নিম্নের ফিসক বুঝানো হয়েছে।
(হাকেম, হা/ ৩২১৯, ২/ ৩১৩, সনদ সহীহ; তিরমিযী, হা/ ২৬৩৫)
(২) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ(রাঃ) ও হাসান বাসরী(রহঃ) বলেন, এটা মুসলিম, ইহূদী, কাফের সকল প্রকার লোকের জন্য সাধারণ হুকুম যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসগতভাবে (আল্লাহর বিধানকে) প্রত্যাখ্যান করে এবং অন্য বিধান দ্বারা বিচার ও শাসন করাকে হালাল বা বৈধ মনে করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উক্ত কাজ করে, অথচ বিশ্বাস করে যে সে হারাম কাজ করছে, সে ব্যক্তি মুসলিম ফাসেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার বিষয়ট আল্লাহর উপর ন্যস্ত। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে ক্ষমা করবেন।
(কুরতুবী, সুরা মায়েদাহ ৪৪ নং আয়েয়াতের তাফসীর)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব
==================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ২
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোন, আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছি তা হ'ল সুরা মায়েদাহ এর ৪৪ নং আয়েয়াতকে চরমপন্থী দের অপব্যাখ্যা। দয়া করে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন। পরবর্তী পর্ব গুলো ধারাবাহিক পড়বেন।
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফের। (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
(৩) তাবেঈ বিদ্বান ইকরিমা, মুজাহিদ, আত্বা ও তাঊসসহ বিগত ও পরবর্তী যুগের আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের সকলে কাছাকাছি এক ই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
(সালাফ ও খালাফের ৩৯ জন বিদ্বানের ফাতওয়া দ্রষ্টব্য; উছূলুত তাকফীর, ৬৪- ৭৪ পৃঃ)
এটাই হ'ল সাহাবী ও তাবেঈগণের ব্যাখ্যা। যারা হলেন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম ও কুফর সম্পর্কে উম্মতের সেরা বিদ্বান ও সেরা বিজ্ঞ ব্যক্তি।
পরবর্তীরা এ ব্যাপারে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল চরমপন্থী। যারা কবীরা গোনাহগার মুমিনকে কাফের বলে ও তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী গণ্য করে এবং তার রক্ত হালাল মনে করে। এরা হ'ল প্রথম যুগের ভ্রান্ত ফের্কা "খারেজী" ও পরবর্তী যুগে তাদের অনুসারী হঠকারী লোকেরা। আরেক দল এ ব্যাপারে চরম শৈতিল্যবাদ প্রদর্শন করে এবং কেবল হৃদয়ে বিশ্বাস অথবা মুখে স্বীকৃতিকেই পূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করে। বস্তুতঃ এই দলের লোকসংখ্যাই সর্বদা বেশী। এরা পূর্ববর্তী ভ্রান্ত ফের্কা "মুর্জিয়া" দলের অনুসারী। দু'টি দল ই বাড়াবাড়ির দুই প্রান্তসীমায় অবস্থান করেছে।
(৪) আব্বাসীয় খলীফা মামূন (১৯৮- ২১৮ হিঃ) -এর দরবারে জনৈক "খারেজী" এলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কোন বস্তু তোমাদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে? জবাবে সে বলল, আল্লাহর কিতাবের একটি আয়েয়াত। তিনি বললেন, সেটি কোন আয়েয়াত? সে বলল, সুরা মায়েদাহ ৪৪ আয়েয়াত। খলীফা বললেন, তুমি কি জানো এটি আল্লাহর নাযিলকৃত? সে বলল জানি। খলীফা বললেন, এ বিষয়ে তোমার প্রমাণ কি? সে বলল, উম্মতের ঐক্যমত(ইজমা). তখন খলীফা তাকে বললেন, তুমি যেমন আয়েয়াত নাযিলের ব্যাপারে ইজমার উপরে খুশী হয়েছ, তেমনি উক্ত আয়েয়াতের ব্যাখ্যায় ও উম্মতের ইজমার উপরে সন্তুষ্ট হও। সে বলল, আপনি সঠিক কথা বলেছেন। অতঃপর সে খলীফাকে সালাম দিয়ে বিদায় হ'ল।
(খত্বীব, তারীখু বাগদাদ, ১০/ ১৮৬; যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ১০/২৮০)
(৫) সঊদী আরবের সাবেক প্রদান মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন বা বিচার করে না, সে ব্যক্তি চারটি বিষয় থেকে মুক্ত নয়ঃ (১) তার বিশ্বাস মতে মানুষের মনগড়া আইন আল্লাহর আইনের চাইতে উত্তম। অথবা (২) সেটি শার ঈ বিধানের ন্যায়। অথবা (৩) শার ঈ বিধান উত্তম, তবে এটা ও জায়েয। এরুপ বিশ্বাস থাকলে সে কাফির এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু (৪) যদি সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য কোন বিধান বৈধ নয়। তবে সে অলসতা বা উদাসীনতা বশে বা পরিস্থিতির চাপে এটা করে, তা'হলে সেটা ছোট কুফরী হবে ও সে কবীরা গোনাহগার হবে। কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হবে না।
(খালেদ আল- আম্বারী, উছূলুত তাকফীর, ৭১-৭২ পৃঃ)
যেমন হাবশার (ইথি ও পিয়া) বাদশাহ নাজাশী ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং সে মর্মে রাসুল(সাঃ)- এর প্রেরিত দূতের নিকট তিনি বায়'আত নিয়েছিলেন ও পত্র প্রেরন করেছিলেন। কিন্তু দেশের নাগরিকগণ খ্রিষ্টান হওয়ায় তিনি নিজ দেশে ইসলামী বিধান চালু করতে পারেননি। এজন্য তিনি দায়ী ছিলেন না। বরং পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিল। সেকারণ ৯ম হিজরীতে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাসুল(সাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে তার গায়েবানা জানাযা পড়েন। কারণ অমুসলিম দেশে তাঁর জানাযা হয়নি।[আবুদাউদ, হা/৩২০৪ "জানায়েয অধ্যায় ৬২ অনুচ্ছেদ]
(আর- রাহীকুল মাখতূম, ৩৫২ পৃঃ মুত্তাফাক্ব 'আলাইহ , মিশকাত, হা/ ১৬৫২ "জানায়েয অধ্যায়)
(৬) শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, কুফর, যুলুম, ফিসক সবগুলি ই বড় ও ছোট দু'প্রকারের। যদি কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা না করে, সূদী লেন-দেন, যেনা- ব্যভিচার বা অনুরুপ স্পস্ট হারামগুলিকে হালাল জ্ঞান করে, সে বড় কাফের, যালেম, ও ফাসেক হবে। আর বৈধ জ্ঞান না করে পাপ করলে সে ছোট কাফের, যালেম ও ফাসেক ও মহা পাপী হবে।
(উছূলুত তাকফীর, ৭৪ পৃঃ) যা তওবা ব্যতীত মাফ হবে না।
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব
=============================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৩
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফের।"(সুরা মায়েদাহ, ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন গত পর্ব-১ ও পর্ব- ২ এর পর পর্ব- ৩ এর মধ্যে আমরা আলোচনা করবো ইনশাহ আল্লাহ। কাফের বলার দলীল হিসাবে আরও কয়েকটি আয়েয়াতঃ
সুরা মায়েদাহ ৪৪ আয়েয়াতটি ছাড়াও আরও কয়েকটি আয়েয়াতকে মুসলমানকে কাফের বলার পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। যেমনঃ সুরা নিসা ৬৫, তওবা ৩১, শুরা ২১, ও আন'আম ১২১ প্রভৃতি।
(১) সুরা নিসা ৬৫. আল্লাহ বলেন,
(অত এব তোমার পালনকর্তার সপথ ! তারা কখনো মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়সালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়সলার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরুপ দ্বিধা- সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে).
সাইয়িদ কুতুব অত্র আয়েয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন 'তাগূতের অনুসারী ঐসব লোকেরা 'ঈমানের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যাবে। মুখে তারা যত ই দাবী করুক না কেন।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, ২/ ৮৯৫)
অথচ "তারা মুমিন হতে পারবে না" এর প্রকৃত অর্থ হবে, "তারা পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না" কারণ উক্ত আয়েয়াত নাযিল হয়েছিল দু'জন মুহাজির ও আনসার সাহাবীর পরস্পরের জমিতে পানি সেচ নিয়ে ঝগড়া মিমাংসার উদ্দেশ্যে।
(বুখারী, হা/ ২৩৫৯; মুসলিম, হা/ ২৩৫৭ ও অন্যান্য)
দু'জন ই ছিলেন বদরী সাহাবী এবং দু'জন ই ছিলেন স্ব স্ব জীবদ্দশায় ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। অত এব তাদের কাউকে মুনাফিক বা কাফির বলার উপায় নেই। কিন্তু চরমপন্থী খারেজী ও শী'আপন্থী মুফাসসিরগণ তাদের কাফের বলায় প্রশান্তি বোধ করে থাকেন। তারা আয়েয়াতের প্রকাশ্য অর্থ নিয়েছেন ও সকল কবীরা গোনাহগারকে "কাফের" সাব্যস্ত করেছেন। অথচ তারা আরবীয় বাকরীতি এবং হাদীসের প্রতি লক্ষ করেননি।
যেমন রাসুল(সাঃ) বলেন, "আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় ( ৩ বার), যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টকারীতা হতে নিরাপদ নয়।"
(বুখারী, হা/৬০১৬; মুসলিম, মিশকাত, হা/ ৪৯৬২ "শিষ্টাচার" অধ্যায়, ১৫ অনুচ্ছেদ)
তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটা ভালবাসবে যা সে তার নিজের জন্য ভালবাসে।
(বুখারী,মুসলিম হা/৪৫; মিশকাত, হা/ ৪৯৬১)
এসব হাদীসের অর্থ ঐ বক্তি ঈমানহীন "কাফের" নয়, বরং পূর্ণ মুমিন নয়। এক ই ভাবে কবীরা গোনাহগার মুমিন "কাফের" হবে না বরং সে 'পূর্ণ মুমিন হবে না।
(২) সুরা তওবাঃ ৩১. আল্লাহ বলেন,
(তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম-উলামা ও পোপ- পাদ্রীদের এবং মারিয়াম পুত্র মাসীহ ঈসাকে "রব" হিসাবে গ্রহন করেছে। অথচ তাদের প্রতি কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধু মাত্র এক উপাস্যের ইবাদত করবে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে, তিনি সে সব থেকে পবিত্র।)
অত্র আয়েয়াতের তাফসীরে সাইয়িদ কুতুব বলেছেন, "এরা মুশরীক এবং তা ঐ শিরক, যা তাদেরকে মুমিনদের গন্ডী থেকে বের করে কাফিরদের গন্ডীতে প্রবেশ করাবে।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, ৩/১৬৬২)
অথচ এর ব্যাখ্যায় সকল মুফাসসির বলেছেন যে, তারা তাদেরকে প্রকৃত "রব" ভাবত না। বরং তাদের অন্যায় আদেশ- নিষেধসমূহ মান্য করত।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) ও যাহহাক বলেন, ইহূদী- নাছারাদের সমাজ ও ধর্মনেতাগণ তাদেরকে সিজদা করার জন্য বলেননি। বরং তারা আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজে লোকদের হুকুম দিতেন এবং তারা তা মান্য করত। আর সেজন্য ই আল্লাহ পাক ঐসব আলেম, সমাজনেতা ও দরবেশগণকে "রব" হিসাবে অভিহিত করেছেন।
(তাফসীর ইবনু জারীর, [বৈরুত ছাপাঃ ১৯৮৬] ১০/ ৮০-৮১ পৃঃ)
হুযায়ফা(রাঃ) ও অনুরুপ বলেন। (তাফসীর কুরতুবী)
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ(রহঃ) বলেন, যদি কেউ আক্বীদাগত ভাবে হারামকে হালাল করায় বিশ্বাসী হয়, তবে সে কাফের হবে। কিন্তু যদি আক্বীদাগতভাবে এতে বিশ্বাসী না হয়। কিন্তু গোনাহের আনুগত্য করে, তবে সে কবীরা গোনাহগার হবে। এমনকি হারামকে হালালকারী যদি মুজতাহিদ হয় এবং তার কাছে উক্ত বিষয়ে সত্য অস্পষ্ট থাকে এবং সে আল্লাহকে সাধ্যমত ভয় করে, তবে সে ব্যক্তি তার গোনাহের জন্য আল্লাহর নিকট পাকড়াও হবে না। তিনি বলেন, কুর আন ও হাদীসে বহু গোনাহের ক্ষেত্রে এরুপ কুফর ও শিরকের শব্দ বর্ণিত হয়েছে।
(ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ঈমান [বৈরুতঃ আল- মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৮/১৯৮৮] পৃঃ৬৭,৬৯)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
" যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা, তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন বিগত ১,২, ও ৩ পর্বে আমরা দেখেছি যে চরমপন্থী বা খারেজী মতবাদে বিশ্বাসী যারা তারা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিদ্বানগণের সঠিক ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে তারা নিজের মতো করে বুঝার কারণে মুসলিমদের কবীরা গোনাহ দেখলেই কাফির বলে তাদের হত্যা করা জায়েয মনে করে। আসুন আজ আরো কিছু আয়েয়াত জেনে নেই যেসব আয়েয়াত দিয়ে তারা মুসলিমদের কাফির মনে করে।
(৩) সুরাঃ শুরাঃ ২১. আল্লাহ বলেন,
"তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে যারা তাদের জন্য দ্বীনের কিছু বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি? ক্বিয়ামতের দিন তাদের বিষয়ে ফায়সালার সিদ্ধান্ত না থাকলে এখুনি তাদের নিস্পত্তি হয়ে যেত। নিশ্চয় ই যালেমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
(সুরা শূরাঃ ৪২/২১)
উক্ত আয়েয়াতে একথা বর্ণিত হয়েছে যে, আইন প্রণয়ণের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। যার কোন শরীক নেই। এক্ষণে যদি কেউ তাতে ভাগ বসায় এবং নিজেরা আইন রচনা করে, তাহ'লে সে মুশরিক হবে। শিরকের উক্ত প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করেছেন খারেজী আক্বীদার অনুসারী মুফাসসিরগণ। ফলে যেসব মুসলিম সরকার কোন একটি আইনও রচনা করেছে, যা আল্লাহর আইনের অনুকূলে নয়, তাদেরকে তারা মুশরিক ও মুরতাদ ধারণা করেছেন এবং তাদেরকে হত্যা করা সিদ্ধ মনে করেছেন। অথচ পূর্বের আয়েয়াতগুলির ন্যায় এ আয়েয়াতের অর্থ তারা প্রকৃত মুশরিক নয়, বরং কবীরা গোনাহগার। কেননা এর প্রকৃত অর্থ আল্লাহর ইবাদতে শরীক করা নয়। বরং জিন ও ইনসানরুপী শয়তানরা হালাল ও হারামের যেসব বিধান রচনা করে, সে সবের অনুসরণ করা। কোন সরকার এগুলি করলে এবং আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে সেটাকে উত্তম, সমান অথবা সিদ্ধ মনে করলে ঐ সরকার সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হবে। কিন্তু তা মনে না করলে সে কবীরা গোনাহগার হবে। ইবনু জারীর, ইবনু কাছিরসহ আহলে সুন্নাতের সকল বিদ্বান এরুপ তাফসীর করেছেন।
(৪) সুরাঃ আন'আমঃ ১২১. আল্লাহ বলেন,
"যেসব পশু জবেহকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তা তোমরা ভক্ষণ করো না। নিশ্চয় ই সেটি ফাসেকী কাজ। শয়তানেরা তাদের বন্ধুদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। এক্ষণে যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহ'লে তোমরা অবশ্য ই মুশরিক হয়ে যাবে।
(সুরা আন'আমঃ ৬/১২১)
এখানেও পূর্বের ন্যায় প্রকাশ্য অর্থে মুশরিক ও কাফির অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন সাইয়িদ কুতুব বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোট একটি প্রশাখাগত বিষয়েও মানুষের রচিত আইনের অনুসরণ করবে, ঐ ব্যক্তি নিঃসন্দেহে "মুশরিক" হবে। যদি ও সে আসলে "মুসলমান". অতঃপর তার কাজ তাকে ইসলাম থেকে শিরকের দিকে তাকে বের করে নিয়ে গেছে। যদি ও সে মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এর সাক্ষ দান অব্যাহত রাখে। কেননা ইতিমধ্যেই সে আল্লাহ ব্যতীত আন্যের সাথে মিলিত হয়েছে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের আনুগত্য করেছে।
(তাফসীর ফী যিলালিল কুর আন, আন'আম ১২১ আয়েয়াতে তাফসীর, ৩/১১৯৮ পৃঃ)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল- গালিব।
===================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৫
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার- ফায়সালা করে না তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোন বিগত পর্ব গুলির ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো "প্রকাশ্য কুফরী" এর ব্যাখ্যা ও "কাফের গণ্য করার ফলাফল" ও "মানুষ হত্যার পরিণাম" নিয়ে।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, সুস্পষ্ট কুফরী না দেখা পর্যন্ত শাসকের আনুগত্যমুক্ত হয়ো না।
(বুখারী, মুসলিম; মিশকাত, হা/ ৩৬৬৬.
কেবল ধারণা ও প্রচারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে না। কেবল ফাসেকী বা কোন কবীরা গোনাহ যথেষ্ট নয়। বরং ইসলামকে পুরোপুরি অস্বীকার করা বুঝাবে। যাতে কোনরুপ অস্পষ্টতা বা গোপনীয়তা থাকে না। জ্ঞানীদের নিকট তার কুফরীর ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত কুর আন ও সুন্নাহর মযবুত দলীল থাকতে হবে। কোন দুর্বল প্রমান বা সন্দেহের ভিত্তিতে নয় কিংবা কোন দল বা ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে নয়। বরং কাউকে কাফের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার থাকবে রাষ্ট্রীয় ইসলামী আদালতের শরী'আত অভিজ্ঞ বিচারকমন্ডলীর অথবা দেশের হাদীসপন্থী বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। অন্য কার সিদ্ধান্তে নয়।
কেননা রাসুল(সাঃ) বলেন, "যদি কেউ তার ভাইকে বলে হে কাফের! তাহলে সেটা তাদের যেকোন একজনের উপর বর্তাবে।
(বুখারী, হা/ ৬১০৪; মুসলিম, হা/ ৬০; মিশকাত, হা/ ৪৮১৫)
এর দ্বারা ছোট কুফরী বুঝানো হয়েছে। কেননা কেউ কাউকে কাফের বললেই কাফের হয়ে যায় না। বরং কুর আন ও সুন্নাহর স্পষ্ট দলীলের ভিত্তিতে যাচাই সাপেক্ষে কুফরী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে এবং বারবার বুঝানো সত্ত্বেও স্বীয় অবিশ্বাসে অটল থাকলে তাকে "প্রকাশ্য কুফরী" হিসাবে গণ্য করা যাবে। কোন মুসলিম সরকারের বেলায় ও এক ই কথা প্রযোজ্য।
তবে কাফের সাব্যস্ত হলে উক্ত শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয, তা নয়। কারণ যুদ্ধ করার বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ। আর তা হ'ল বৈধ কর্তৃপক্ষ, অনুকূল পরিবেশ এবং যথার্থ শক্তি ও পর্যাপ্ত সামর্থ থাকা।
আল্লাহ বলেন, "তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর"(সুরা তাগাবুন ৬৪/১৬)
তিনি বলেন, "আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করেন না" (সুরা বাক্বারাহ, ২/২৮৬)
অন্যথায় তা আত্মহননের শামিল হবে। যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
যেমন তিনি বলেন, "তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।" (সুরা বাক্বারাহ, ২/১৯৫)
কাফের গণ্য করার ফলাফলঃ
উল্লেখ্য যে, কাফির ঘোষণা করা কেবল সরকারের বিরুদ্ধে নয়, যে কোন মুসলিমের বিরুদ্ধেও হতে পারে। আর কাফির গণ্য করে তাদের রক্ত ও ধন-সম্পদ যদি হালাল করা হয়, তাহলে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন বাপকে কাফের গণ্য করা হলে মায়ের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। সন্তান পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি তার জন্য পিতার রক্ত হালাল হবে। এক ই অবস্থা হবে ভাই ভাইয়ের ক্ষেত্রে, স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য আত্মীয়- স্বজনের ক্ষেত্রে। আর যদি এটা যদি কোন সরকারের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে সেটা আরো কঠিন হবে এবং সারা দেশে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। নিরপরাধ নারী- শিশু ও সাধারণ নির্দোষ মানুষ সরকারী জেল-যুলুম ও নির্যাতনের অসহায় শিকারে পরিণত হবে, যা আজকাল বিভিন্ন দেশে হচ্ছে।
কিছু লোক বোমা মেরে দ্বীন কায়েম করতে চায়। তারা অমুসলিমের চাইতে মুসলিম নেতাদের হত্যা করাকে বেশী অগ্রাধিকার দেয়। তাদের যুক্তি "মাছি অতক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ দুর্গন্ধ থাকবে।" অথচ শয়তান যেহেতু আছে, দুর্গন্ধ থাকবেই, মাছি ও থাকবে।
তবে মুমিন- কাফির যে-ই হৌক নিরস্ত্র নিরপরাধ কোন মানুষকে হত্যা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামী আদালত বা দায়ীত্বশীল বৈধ কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যাযোগ্য আসামী সাব্যস্ত করতে পারে না। অথচ স্বেচ্ছাচারী কিছু চরমপন্থীর জন্য আজ নির্দোষ মুসলিম নর-নারী নিজ দেশে ও প্রবাসে ধিকৃত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
মানুষ হত্যার পরিণামঃ
আল্লাহ বলেন, "যে কেউ জীবনের বদলে জীবন অথবা জনপদে অনর্থ সৃষ্টি করা ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে।" (সুরা মায়েদাহঃ ৫/৩২)
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, "যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত তাঁর কসম করে বলছি, একজন মুমিনকে হত্যা করা অবশ্য ই আল্লাহর নিকটে দুনিয়া লয় হয়ে যাওয়ার চাইতে অধিক ভয়ংকর।"
(নাসা ঈ, হা/ ৩৯৮৬; আলবানী, ছীহুল জামে' হা/৪৩৬১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, "একজন মুসলিম হত্যা করার চাইতে দুনিয়া লয় হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অধিক হালকা বিষয়।" (নাসা ঈ, হা/ ৩৯৮৭; তিরমিযী, হা/ ১৩৯৫; মিশকাত, হা/ ৩৪৬২; ক্বিসাস অধ্যায়)
এর অর্থ এটা নয় যে, কাফেরকে হত্যা করায় নেকী আছে। সেটা হলে রাসুল(সাঃ) শীর্ষ কাফের নেতা আবু সুফিয়ানকে মক্কা বিজয়ের আগের রাতে নিরস্ত্র অবস্থায় ধরা পড়ার পরেও তাকে কেন হত্যা করেননি? বরং তিনি তাকে মুসলিম হওয়ার সুযোগ দেন। পরদিন মক্কা বিজয়ের পর প্রদত্ত ভাষণে তিনি সকল কাফির- মুশরিকদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং রক্তপাতকে স্থায়ীভাবে হারাম করে দেন।
(সীরাতে ইবনে হিশাম, ২/ ৪০৩, ৪১৫; সফীউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, ৪০৫, ৪০৭ পৃঃ বুখারী, হা/ ১০৪; মুত্তাফাক্ব 'আলাইহ, মিশকাত, হা/ ২৭২৬)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
====================================
যা জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরীঃ পর্ব- ৬
"যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না তারা কাফের।" (সুরা মায়েদাহঃ ৪৪)
সম্মানীত দ্বীনি ভাই ও বোন আমরা বিগত পর্ব গুলোর ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো "কবীরা গোনাহগার কাফের নয়" এবং "মুসলিম-এর নিদর্শন" ও " উত্তরনের পথ".
কবীরা গোনাহগার কাফের নয়ঃ
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, "মুমিন থাকা অবস্থায় কোন ব্যভিচারী ব্যভিচার করতে পারে না, কোন চোর
চুরি করতে পারে না, কোন মদ্যপ মদ্যপান করতে পারে না, কোন ডাকাত ডাকাতি করতে পারে না, কেউ গণীমতের মালে খেয়ানত করতে পারে না। অত এব তোমরা সাবধাণ হও! তোমরা সাবধাণ হও! ঈবনু আব্বাস-এর বর্ণনায় আরও এসেছে, 'মুমিন থাকা অবস্থায় হত্যাকারী কাউকে হত্যা করতে পারে না। এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস(রাঃ) দুই হাতের আঙ্গুলগুলি পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে অতঃপর বের করে নিয়ে বলেন, যখন সে তওবা করে, তখন ঈমান তার মধ্যে আবার প্রবেশ করে। ইমাম বুখারী(রহঃ) অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে 'মুমিন' অর্থ 'পূর্ণ মুমিন। পাপ কাজের সময় ঈমানের নূর তার অন্তর থেকে বেরিয়ে যায়।'
(বুখারী, নুসলিম, মিশকাত, হা/ ৫৩)
আর মুসলমান পরস্পরে যুদ্ধ করলেও তারা যে কাফের ও মুরতাদ হয় না, তার বড় প্রমাণ হ'ল সুরা হুজুরাত ৯ আয়েয়াতটি। যেখানে আল্লাহ পরস্পরে যুদ্ধরত উভয়পক্ষকে 'মুমিন' বলে অভিহিত করেছেন।
মুসলিম-এর নিদর্শনঃ
এক্ষনে মুসলিম কে? সে বিষয়ে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। আর যে ব্যক্তি আমাদের ক্বিবলাকে ক্বিবলা মানে, আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের যবহকৃত প্রাণীর গোশত খায়, সে 'মুসলিম।' তার জন্য সেই পুরস্কার, যা অন্য মুসলমানদের জন্য রয়েছে এবং তার উপরে সেই শাস্তি, যা অন্য মুসলমানদের উপরে প্রযোজ্য।
(নাসাঈ, হা/ ৩৯৬৮; বুখারী, মিশকাত, হা/১৩)
উত্তরণের পথঃ
মুসলিম সমাজে কারু মধ্যে "প্রকাশ্য কুফরী" দেখা গেলে প্রথমে তাকে উপদেশের মধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। অতঃপর বারবার চেষ্টা সত্বেও না পারলে ঐ ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলবে এবং তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দো'আ করবে। যদি সরকার অমুসলিম হয় ও ইসলামের বাধা সৃষ্টি করে অথবা মুসলিম সরকারের মধ্যে "প্রকাশ্য কুফরী" দেখা দেয় এবং ইসলামের সাথে দুশমনী করে, তাহলে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকলে বৈধ পন্থায় সেটা করবে। ন ইলে সবর করবে এবং আমল বিল মা'রুফ ও নাহি 'আনিল মুনকারের মূলনীতি অনুসরণে ইসলামের পক্ষে জনম গঠন করবে। এটাই নবীগণের তরীকা।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আত্মশুদ্ধি ও পরিচর্যার মাধ্যমে সমাজশুদ্ধির কাজ করেছেন। আমাদেরকেও সেপথে এগোতে হবে। বাধা এলে তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন। পরে সক্ষমতা অর্জন করলে এবং আক্রান্ত হ'লে জিহাদ করেছেন কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে, কোন মুসলিম বা মুনাফিকের বিরুদ্ধে নয়। আমরা যদি ইসলামের অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ চাই, তাহ'লে আমাদেরকে রাসুল(সাঃ) -এর পথে চলতে হবে, অন্য পথে নয়।
কবি আবু ওসমান সাঈদ বিন ইসমাঈল (২৩০- ২৯৮ হিঃ) বলেন,
"তোমার দ্বীনের অবস্থা কি যে তুমি তাকে ময়লাযুক্ত করার উপর খুশি হয়ে গেছ? আর তোমার পোষাক ময়লা দিয়ে ধৌত করা হয়েছে'? তুমি নাজাত চাও অথচ তুমি সে পথে চলোনা। নিশ্চয় ই নৌকা কখনো শুকনা মাটিতে চলে না।"
(বায়হাক্বী শু'বা, ১২ অধ্যায় ২/ ৩২৯ পৃঃ)
সুত্রঃ জিহাদ ও ক্বিতাল
লেখকঃ ডঃ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
সুন্দর ব্যাখ্যা।
ReplyDelete