শরহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া: পর্ব- ২৪
Source LINKইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীতে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
্রلَيْسَ أَحَدٌ يُحَاسَبُ يوم القيامة إِلاَّ هَلَكَ قَالَتْ عَائِشَةُ: فَقُلْتُ: أَوَلَيْسَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: فأما من أوتي كتابه فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا؟ فَقَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم: ্রإِنَّمَا ذَلِكِ الْعَرْضُ وَلَيس أحد يناقش الحساب يوم القيامة إلا عذب
“কিয়ামতের দিন যার হিসাব নেয়া হবে সে হালাক (ধ্বংস) হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ কি বলেন নি,
فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا﴾
“যাকে ডান হাতে আমলনাম দেয়া হবে, অচিরেই তার সহজ হিসাব নেয়া হবে? (সূরা ইনশিকাকঃ ৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মূলতঃ এটি হিসাব নয়; বরং তা হল শুধু আমলগুলো পেশ করা। কিন্তু কিয়ামতের দির যার (কঠিন) হিসাব নেয়া হবে, তাকে শাস্তি দেয়া হবে”। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর যেসব বান্দার কড়াকড়ি হিসাব নিবেন, তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে। তবে তিনি কারো উপর যুলুম করবেন না। আল্লাহ তাআলা তাঁর অনেক বান্দাকেই ক্ষমা করে দিবেন। ইনশা-আল্লাহ অচিরেই সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আসছে। সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো বর্ণিত হয়েছে যে,
إنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ فَإِذَا ِمُوسَى آخِذٌ بِقَائِمَةٍ مِنْ قَوَائِمِ الْعَرْشِ فَلاَ أَدْرِى أَفَاقَ قَبْلِى أَمْ جُزِىَ بِصَعْقَةِ الطُّورِগ্ধ
“কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে পড়বে। আমিই তখন সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাবো। তখন দেখবো যে, মুসা (আঃ) আল্লাহর আরশের একটি খুঁটি ধরে আছেন। আমি জানি না, তিনি আমার পূর্বেই হুশ ফিরে পেয়েছেন? না কি তুর পাহাড়রে বেহুশ হওয়ার কারণেই আজ তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে? এটি হচ্ছে কিয়ামতের মাঠের বেহুশ হওয়া। যখন আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য আসবেন এবং আল্লাহর নূরে সমস্ত যমীন আলোকিত হবে, তখন আল্লাহ তাআলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেক গিয়ে সকল মাখলুক বেহুশ হয়ে যাবে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, এখানে বেহুশ হওয়া দ্বারা যদি হাশরের মাঠের বেহুশ হওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেই হাদীছের কি জবাব হবে যেখানে বলা হয়েছে,فَإِنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الأَرْضُ فَأجد مُوسَى باطشا بِقَائِمَة الْعَرْشِ “কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে পড়বে। আমার কবরই তখন সর্বপ্রথম উন্মুক্ত করা হবে। তখন দেখতে পাবো যে, মুসা (আঃ) আল্লাহর আরশের একটি খুঁটি ধরে আছেন?
এর জবাব হচ্ছে হাদীছের এই শব্দটি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। এই কারণেই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখানে রাবী এক হাদীছকে অন্য একটি হাদীছের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দুই শব্দকে একসাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। তাই এভাবে হাদীছটি এসেছে। মূলতঃ হাদীছ দু’টির একটি এ রকমঃ
إنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ
“কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে পড়বে। আমিই তখন সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাবো”। যেমন পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। অন্য হাদীছটি হচ্ছে,أنا أَوَّلَ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الأَرْضُ يوم القيامة “কিয়ামতের দিন আমার কবরই তখন সর্বপ্রথম উন্মুক্ত করা হবে”। এই হাদীছটি বর্ণনাকারী অন্য হাদীছের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। যারা এই কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে ইমাম আবুল হাজ্জাজ আল মিয্যী, শাইখ শামসুদ্দিীন ইবনুল কায়্যিম এবং আমাদের শাইখ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর (রঃ) অন্যতম।
এমনি কতক বর্ণনাকারী সন্দেহের বশবতী হয়ে বলেছেনঃفَلاَ أَدْرِى أَكَانَ فِيمَنْ صَعِقَ فَأَفَاقَ قَبْلِى أَوْ كَانَ مِمَّنِ اسْتَثْنَى اللَّهُ আমি জানি না, মুসা (আঃ) কি বেহুশ হয়ে আমার পূর্বেই হুশ ফিরে পেয়েছেন? না কি তিনি ঐ সমস্ত সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা বেহুশ হওয়া থেকে মুক্ত রেখেছেন।
তবে এ ক্ষেত্রে ঐ বর্ণনাটিই সংরক্ষিত হয়েছে, যা অনেকগুলো সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে প্রথম বর্ণনাটি এবং তার তাৎপর্যও সঠিক। কেননা কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য আগমণ করবেন, তখন আল্লাহর নূর প্রকাশিত হওয়ার কারণে সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। মুসা (আঃ) যদি তাদের সাথে তখন বেহুশ না হন, তাহলে সম্ভবতঃ সেই দিনের বেহুশ হওয়ার বিনিময়ে তাঁকে এইবার বেহুশ হওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে, যেদিন আল্লাহ তাআলা তুর পাহাড়ে স্বীয় নূর বিচ্ছুরিত করে পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন। সুতরাং তুর পাহাড়ে আল্লাহর নূর প্রকাশিত হওয়ার সময় মুসা (আঃ) বেহুশ হওয়ার বদলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার আগমণে যখন সমস্ত সৃষ্টি বেহুশ হয়ে পড়বে, সে সময় তিনি বেহুশ হবেন না। হে পাঠক! আপনি এই মহান বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন এবং এ ব্যাপারে মোটেই গাফিলতি করবেন না।
ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল, ইমাম তিরমিযী এবং আবু বকর ইবনে আবীদ্ দুনয়া (রঃ) হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, হাসান বসরী বলেনঃ আমি আবু মুসা আশআরী (রাঃ)কে বলতে শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে তিনবারে আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয়বার শুধু পরস্পর বিতর্ক ও দোষারোপ চলতে থাকবে এবং লোকেরা উযর-আপত্তি পেশ করবে। তৃতীয়বার পেশ করার সময় আমল নামা প্রদান করা হবে। তখন যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে এবং যাদের হিসাব সহজভাবে ও দ্রুত সম্পন্ন হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা বাম হাতে আমলনামা পাবে, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
ইমাম ইবনে আবীদ্ দুনয়া আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রঃ) হতে এ বিষয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন। কবিতার লাইনগুলো হচ্ছে,
وَطَارَتِ الصُّحُفُ في الْأَيْدِي مُنَشَّرَة... فِيهَا السَّرَائِرُ وَالْأَخْبَارُ تُطَّلَعُ
فَكَيْفَ سَهْوُكَ وَالْأَنْبَاءُ وَاقِعَة... عَمَّا قَلِيلٍ، وَلَا تَدْرِي بِمَا تَقَعُ
أَفِي الْجِنَانِ وَفَوْزٍ لَا انْقِطَاعَ له... أَمِ الْجَحِيمِ فَلَا تُبْقِي وَلَا تَدَعُ
تَهْوِي بِسَاكِنِهَا طَوْرًا وَتَرْفَعُهُمْ... إِذَا رَجَوْا مَخْرَجًا مِنْ غَمِّهَا قُمِعُوا
طَالَ الْبُكَاءُ فَلَمْ يُرْحَمْ تَضَرُّعُهُمْ... فِيهَا، وَلَا رِقَّية تُغْنِي وَلَا جَزَعُ
لِيَنْفَعِ الْعِلْمُ قَبْلَ الْمَوْتِ عَالِمَه... قَدْ سَالَ قَوْمٌ بِهَا الرُّجْعَى فَمَا رَجَعُوا
সেদিন সকলের হাতে উন্মুক্ত আমলনামা প্রদান করা হবে। তাতে থাকবে তাদের সকল অপ্রকাশ্য আমল এবং তাদের প্রকাশ্য আমলের খবরও তাতে থাকবে।
তুমি কেমন করে গাফেল হয়ে আছো? অথচ অচিরেই সকল সংবাদ বাস্তবায়িত হবে। তুমি জাননা যে, কোথায় হবে তোমার ঠিকানা? তোমার ঠিকানা কি হবে জান্নাতে এবং এমন সাফল্যের স্থানে, যা কখনো নিঃশেষ হবেনা? না কি তোমার আবাস্থল হবে জাহান্নাম? যা শরীরের কোন কিছুকেই অবশিষ্ট রাখবেনা এবং না জ্বালিয়ে ছাড়বেনা।
জাহান্নামের অধিবাসীকে তার সর্বনিম্নস্তরে নিক্ষেপ করা হবে। তারা যখন তার আযাব থেকে বের হওয়ার আবেদন করবে, তখন তাদেরকে উপরে উঠানো হবে। কিন্তু বের হওয়ার কোন সুযোগ রাখা হবেনা।
তারা সেখানে অনেক কাঁদবে, কিন্তু ক্রন্দনের পরও সেখানে তাদের উপর কোন প্রকার রহম করা হবেনা। ক্রন্দন ও হা-হুতাশ করেও সেখানে কেউ লাভবান হবেনা।
মৃত্যুর পূর্বেই যেন আলেম তার ইলম দ্বারা উপকৃত হয়। কেননা অনেক লোকই সেখানে গিয়ে ফেরত আসার আবেদন করেছে। কিন্তু তারা ফিরে আসতে পারেনি। (চলবে)
No comments:
Post a Comment