Sunday, August 3, 2014

শরহুল আকীদাহ আত তাহাবীয়া: পর্ব- ২২

Source LINK 
শরহুল আকীদাহ আত তাহাবীয়া: পর্ব- ২২

কিয়ামত ও পুনরুত্থান সত্য প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে আসহাফে কাহাফের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। কিভাবে তিনি তাদেরকে গুহার মধ্যে তিনশ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রেখে দিয়েছেন (ঘুম পাড়িয়েছেন)!! অত:পর তাদেরকে সেখান থেকে মানব সমাজে বের করে এনেছেন। সৌর বছর হিসাবে তিনশ বছর। আর চন্দ্রের হিসাবে তিনশ নয় বছর। আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে বলেনঃ
﴿وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا﴾
“এভাবে আমি নগরবাসীদেরকে তাদের অবস্থা জানালাম, যাতে লোকেরা জানতে পারে আল্লাহর প্রতিশ্র“তি সত্য এবং কিয়ামতের দিন নিশ্চিতই আসবে”। (সূরা কাহাফঃ ২১)
আর যারা বলে মানুষের দেহ শুধু জাওহার অর্থাৎ স্বনির্ভর একটি পদার্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে, তারা দেহের পুনরুত্থান সম্পর্কে এলোমেলো ও বিচ্ছিন্ন কথা বলেছে। এ ব্যাপারে তারা দুই দলে বিভক্ত। এক দল বলেছে, মানুষের দেহ গঠনের উপদানগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাকে নতুন করে পুনরুত্থিত করা হবে।
আরেক দল বলেছে, দেহের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাই একত্রিত করা হবে। যারা এই কথা বলে, তাদের উপর আপত্তি করা হয়েছে যে, আমরা দেখতে পাই যে কোন কোন মানুষকে হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলে। আবার মানুষও অনেক প্রাণী ভক্ষণ করে থাকে। তাই যেই মানুষকে কোন প্রাণী খেয়ে ফেলেছে, সেই প্রাণীর শরীরের অংশগুলোকেই যদি একত্রিত করে পুনরুত্থিত করা হয়, তাহলে তার ভক্ষিত মানুষটি যেহেতু তার শরীরের সাথে মিশে গেছে, তাই পুনরুত্থানের সময় তো শুধু প্রাণীটিই পুনরুত্থিত হবে। তার ভক্ষিত মানুষটি কোথায় যাবে? আর মানুষের ভক্ষিত প্রাণীগুলো দ্বারা যেহেতু মানুষের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৃদ্ধি পায়, তাই মানুষকে তার শরীরের অংশগুলোসহ পুনর্জীবিত করা হলে তার ভক্ষিত প্রাণীগুলোর কী অবস্থা হবে? আর যদি এ ক্ষেত্রে বলা হয় যে, হিংস্র প্রাণীর ভক্ষিত মানুষের অংশগুলো হিংস্র প্রাণী থেকেই পুনরুত্থিত হবে, তাহলে তো মানুষকে পুনরুত্থিত করা হলো হিংস্র প্রাণীর ভিতর থেকে; মানুষ থেকে নয়।
তাদের উপর আরো আপত্তি করা হয়েছে যে, মানুষের অবস্থা ও স্বভাব সবসময়ই পরিবর্তন ও বিলীন হতে থাকে। কোন অবস্থায় তাকে পুনরুত্থিত করা হবে? মৃত্যুর সময় যে অবস্থা ও স্বভাবের উপর সে ছিল, তাকে কি সেই অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে? যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে আবশ্যক হয় যে, তাকে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। অথচ এটি দলীল বিরোধী কথা।
এই কথার প্রবক্তাগণের কেউ কেউ দাবী করেছে যে, মানুষের দেহে এমন কতিপয় অংশ আছে, যা কখনো পরিবর্তন ও বিলীন হয়না এবং তা অন্য কোন বস্তুর সাথে মিশেও না। মানুষ যেই প্রাণীগুলোকে ভক্ষণ করে, তার কোন অংশ মানুষের শরীরের এই অংশগুলোর সাথে মিশ্রিত হয়না।
বিদ্বানগণ অবগত আছেন যে, মানুষের শরীরের সব অংশই পচে গলে যায়। কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা। সুতরাং এই প্রকার লোকেরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে যা উল্লেখ করেছে, তা দেহের পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী দার্শনিকদের সন্দেহকেই শক্তিশালী করেছে।
সালফে সালেহীনগণ যেই কথার উপর ছিলেন এবং যার উপর অধিকাংশ বিদ্বান রয়েছেন, তা হচ্ছে মানুষের দেহ এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। মানুষের দেহ মাটির সাথে মিশে যায়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে মাটি হতে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। যেমন প্রথমবার সৃষ্টির সময় সে অন্য বস্তুর সাথে মিশে ছিল। সে শুক্রকীটের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল। অতঃপর সে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর মাংসপিন্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর তা গোশত ও মাংসে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে সুঠাম দেহের একজন মানুষ হিসাবে তৈরী করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঅলা তাকে পুনরুত্থিত করবেন। তার সব অংশ পচে গলে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর তাকে আল্লাহ তাআলা পুনরায় নতুনভাবে সৃষ্টি করবেন। তবে তার দেহের ‘আজবুয যানাব’ নামক অংশটি (পিঠের একদম নীচের ক্ষুদ্রতম অংশটি) নষ্ট হয়না। যেমন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
্রكُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلاَّ عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ ابن آدم وَفِيهِ يُرَكَّبُগ্ধ
“বনী আদমের দেহের অংশ ‘আজবুয যানাব’ ব্যতীত সবকিছুই যমীন খেয়ে ফেলে। এ থেকেই বনী আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং কিয়ামতের দিন এখান থেকেই তাকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে”।
অন্য হাদীছে এসেছে, কিয়ামতের দিন যমীনে পুরুষের বীর্যের ন্যায় বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এর মাধ্যমে তারা কবর থেকে বের হবে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণের ফলে যমীনে উদ্ভিদ উদগত হয়।
সুতরাং উভয় সৃষ্টির ধরণ এক হলেও তা মূলতঃ দুই প্রকার। এক দিক থেকে তা পরস্পর সাদৃশ্য এবং অভিন্ন। আবার অন্য দিক থেকে উভয় সৃষ্টি ভিন্ন ভিন্ন। পুনরুত্থান প্রথম সৃষ্টির মতই। যদিও পুনরুত্থানের উপাদানের উৎস ও প্রথম সৃষ্টির উপাদানের উৎসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং মানব দেহের ‘আজবুয যানাব’ নষ্ট হয়না। আর অন্যান্য অংশ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং মানুষের যেই অংশ নষ্ট হয়না, তা থেকেই তাক পুনরত্থিত করা হবে। এটি জানা কথা যে, কেউ কোন ব্যক্তিকে শিশু অবস্থায় দেখার পর পুনরায় বৃদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেলে বুঝতে সক্ষম হয় যে, এই হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যাকে সে শিশু অবস্থায় সে দেখেছিল। যদিও মানুষের মধ্যে সদা পরিবর্তন সাধিত হয়। এমনি সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও। যে ব্যক্তি যখন কোন গাছকে ছোট অবস্থায় দেখে, অতঃপর সেটিকে বড় হওয়ার পর দেখে, তখন সে বলেঃ এটিই সেটি।
তবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টির সময় মানুষের সিফাত (বৈশিষ্ট ও গুণাগুণ) প্রথম সৃষ্টির বৈশিষ্টের অনুরূপ হবেনা। সিফাত সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। বিশেষ করে জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা দুনিয়ার মত থাকবেনা। জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের আকৃতি হবে আদম (আঃ)এর মত। দৈর্ঘ হবে ৬০ হাত। সহীহ বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য কিতাবে এটি বর্ণিত হয়েছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, তার দৈর্ঘ হবে ৭ হাত। পুনর্বার সৃষ্টির পর মানুষ আর কোন বিপদাপদের সম্মুখীন হবেনা। অথচ এই পৃথিবীতে থাকাকালে মানুষ সবসময় বিপদাপদ ও মসীবতের সম্মুখীন হয়ে থাকে।

No comments:

Post a Comment