Sunday, August 3, 2014

মিউজিক কি হারাম ?

মিউজিক কি হারাম ??? - (ডঃ জাকির নায়েক)

Source LINK

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন, 
“এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে  এবং উহাকে (আল্লাহর পথ) নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি”।  [৩১-৬]

আল-ওয়াহিদি (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা), অন্যান্য তাফসীরকারগণের সাথে ব্যাখ্যা করেন যে, 
এই আয়াতে “অবান্তর কথাবার্তা” বলতে গান সঙ্গীতকে বুঝানো হয়েছে। যেসকল সাহাবাগণ এই ব্যাখ্যা প্রদান করেন তারা হলেন ইবন আব্বাস,
ইবন মাসউদ, মুজাহিদ,ইকরিমা(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)। ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, 
“আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, ‘অবান্তর কথাবার্তা’ হল গান”।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
“আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে,‘আগামীকাল ফেরত এসো’। রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন,বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”।
[বুখারী,ভলিউম ৭, বুক ৬৯,সংখ্যা৪৯৪]

এই হাদীসে উল্লেখ হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র হারাম, এবং উলামাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। 
ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) তাঁর বই ইগাছাতুল লাহফান এ বলেন, 
“যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বৈধ মনে করবে’, তার মানে তিনি বুঝিয়েছেন এটা অবৈধ, এরপর লোকেরা একে বৈধ বানিয়েছে ”।

• আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
‘একদল লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন’ সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তারা কি ‘লা~ ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই সাক্ষ্য প্রদান করে?”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ, এবং তারা সিয়াম ও হজ্জও পালন করে”।
সাহাবাগণ আরজ করলেন,“তাহলে, তাদের সমস্যা কি ছিল?” তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
“তারা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল ও নারী সঙ্গীতশিল্পী ব্যবহার করবে। (একদিন) তারা রাতভর মদপান, হাসি তামাশা করে নিদ্রা যাবে, সকালে(আল্লাহর ইচ্ছায়) তারা বানর ও শূকরে পরিণত হবে”। [ইগাছাতুল লাহফান]

• আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের কাবাঘরের চারপাশের ইবাদতের কথা সমালোচনা করে বলেন, 
“(এ ঘরের পাশে) তাদের (জাহেলী যুগের) নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না” [সূরা আল আনফাল ৮-৩৫] ।
ইবন আব্বাস, ইবন উমর,আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি বাজানো।

একদিন হযরত আয়েশা (রাঃ) -এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা (রাঃ) বললেন,  খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। {সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭}

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। {সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪}

মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়। 

সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা :
• ক) নিফাক এর উৎস
• খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
• গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
• ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
• ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
• চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
• ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।–
[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭]

চার ইমামের ভাষ্য
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহঃ -
অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম মালেক রাহঃ কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।
(কুরতুবী ১৪/৫৫) 

ইমাম শাফেয়ী রাহঃ বলেছেন যে, 
গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক। 
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। 
(ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫)

হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। 
আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম। 
(আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮)

ইমাম শাফেয়ী রাহঃ শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। 
কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে। 
(জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ )
মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।-ফাতহুল বারী ৯/২২৬)

No comments:

Post a Comment