Wednesday, August 13, 2014

ইসলাম আখেরাতের সফলতার জন্যে, দুনিয়া অর্জনের জন্যে নয়

   Source  LINK  ,  Profile  LINK   ---->> Shaikh Muzammel Al-hoque


ফেজবুক অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তবতার মুখে হক কথা..
.
ফেজবুকের মাধ্যমে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় যা পূর্বে হয়নি। ইতি পূর্বে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, তার মাধ্যমে যে সত্যটি আবিষ্কৃত হল তা দাওয়াতি জীবনের একটি মাইল ফলক।

ক) ইসলাম আখেরাতের সফলতার জন্যে, দুনিয়া অর্জনের জন্যে নয়ঃ 

মুসলমানরা ইসলামকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের ব্যবসা হিসেবে বুঝে নিয়েছেন। এ ব্যবসাতে কামিয়াব হতে কেউ সূফী ধারাকে মূল পূঁজি মণে করেছেন। আর কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা বেছে নিয়েছেণ। শুধু তাই নয় মুসলমানকে আরমার্ড ফাইটার এ রূপান্তরিত করা হয়েছে । পক্ষান্তরে আল্লাহ ইসলামকে আখেরতে সফলতার হাতিয়ার বলেই আখ্যা দিয়েছেন।
هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ-الصف/10-11
তোমাদেরকে কি এমন একটি ব্যবসার কথা বলবো না যা তোমাদেরকে কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে সম্পদ ব্যয় করবে, জীনের ঝুঁকি ও কষ্ট মেনে নিয়েও এতে চেষ্টা করবে। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর যদি বুঝতে পারো-(আস সাফ /১০-১১)।

খ) জান দিয়ে আখেরাত কামাই করতে ইসলাম বলে নাইঃ

ঈমান ও আমলের কারণে যেখানে নানাবিধ ঝুঁকি দেখা দেয় তাতে সাহাবাগণ ধৈর্য ধারণের নিদর্শন রেখে গেছেন। তাদের কাজ আমাদের পথিকৃৎ। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নিজ ইচ্ছায় জীবন উৎসর্গ করতে হবে এমনটি ইসলামে পাওয়া যায় নাই।
সোহাইব রাঃ কাফেরদের হাতে বন্দী হলে টাকার বিনিময়ে নিজের জীবন রক্ষা করেন। আম্মার ঈবণূ ইয়াসের রাঃ মিথ্যা বলে, শিরক উচ্চারণ করে নিজেকে আবুজাহলের হাত হতে ছুটিয়ে নেন। জীবন দেওয়াই যদি শ্রেষ্ঠ কাজ হত তাহলে এই সাহাবীগণ কেন জীবন দিলেন না? তাদের কাজকে সাপোর্ট করে কেন আয়াত নাজেল হল?
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ- البقرة/207
মানুষের মধ্যে অনেকে চায় নিজের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে, কিন্তু আল্লাহ বান্দার প্রতি অতীব কোমল ও করুণা শীল- ( বাকারা/ ২০৭)।
এর মানে জীবন কেন দিতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে? এমন হলেত আল্লাহ আম্মার ও সহাইব রাঃ এর কাজে খুশী হতেন না ? তারা জীবন না দিয়ে বরং নানান উপায়ে জীবন রক্ষা করেছেন। আল্লাহ আম্মারের কাজের অনুমোদন দিয়ে বলেছেনঃ
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَٰكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ- النحل/106
যে কুফরি করবে ঈমানের পরে, সে আল্লাহর গজবে নিপতিত হবে,তার জন্যে রয়েছে মস্তবড় আজাব। কিন্তু ঐ ব্যক্তিকে আজাব দেওয়া হবেনা যাকে কুফরি কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে অথচ ঈমান তার অন্তরে জাগরূক রয়েছে। হ্যাঁ, মণের খুশীতে কুফরি গ্রহণ করলে তার বিষয়ে কোণই ছাড় দেওয়া হবেনা- ( নাহ ল/ ১০৬)।
এ আয়াতে জীবনকে মিথ্যার বিনিময়েও বাঁচিয়ে রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- الأنعام/162
বল আমার নামাজ এবং সকল ইবাদাত, বাঁচা ও মরা সবই দুনিয়ার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে-(আন আম/ ১৬২)।
উক্ত আয়াতে জান-মাল ইচ্ছে করে বাজী রাখতে বলা হয়নি যেমন অনেকে মনে করেন। বরং শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, এসবই সকল যোগ্যতা ও নেয়ামত শুধুই আল্লাহকে খুশী করার জন্যে। অন্যকে খুশী করার জন্যে নয়; না নেতাকে না সংগঠনকে, না দলের স্বার্থে না ব্যক্তিগত স্বার্থে। কাফেররা যেমন বাচার জন্যে বাঁচে, মুসলমান বাচার জন্যে বাঁচেনা। বরং মনে করে সে যত বেশী বাঁচবে তত বেশী আল্লাহর এবাদাত করতে পারবে এবং ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবে। কাফেররা তাদের ভগবান/এলাহ এর জন্যে সন্তান ও নিজের জীবন উৎসর্গ করে মুমেন তা করেনা, করতে পারেনা। মু’মেন জিহাদে যায় ইসলাম ও মুসলমানদেরকে রক্ষা করতে মরতে যায়না।

গ) দুনিয়া ও আখেরাতের সম্পর্ক সাপে-নেউলেঃ

দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে আল্লাহ পাক নিজেই বিপরীত রেখা অংকন করে দিয়েছেন। মানে দুনিয়া ও আখেরাত বিপরীতমুখী। এ দুইটির মধ্যে সম্মীলন সাধন সম্ভব নয়।
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ ۖ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ- الشورى/120
যে আখেরাতের অর্জন চাইবে তাকে যা চাইবে তার চেয়েও বেশী দেব। আর যে দুনিয়ার অর্জন চাইবে তাকে দুনিয়া দিলেও আখেরাতে কিছুই দেব না-( শূরা/ ১২০)।
হাসান আলবাসরি রঃ কে দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে কি সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করলে বলেনঃ
علاقتهما مثل علاقة الشرق بالمغرب قدر ما اقبربت من أحدهما ابتعدت من الأخرى.
দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের সম্পর্ক। এক দিকে নিকটে যাবে অন্য দিক থেকে তত দূরে সরে পড়বে। একই প্রশ্নের জওয়াবে ফাদল ঈবণূ আইয়াদ রাঃ বলেছেনঃ
مثلهما مثل الضرتين فإن أرضيت الواحدة أغضبت الأخرى.
দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে সম্পর্ক দুই সতীনের সম্পর্কের মত; একজনকে খুশী করেছ তোঁ আরেক জন রেগে গেছে।

ঘ) ইমান ও নেক আমলের বিনিময়ে দুনিয়া লাভের আশা করা ভ্রান্ত ধারনাঃ

বাস্তবতা এই যে দুনিয়া বাদি সূফী ও আন্দলোন কামী ইসলামের কর্মীরা ইসলামকে দুনিয়ার প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষমতা ও সুখ্যাতি অর্জনের মাধ্যম বানিয়েছেন। দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি দুই হাতে লুটিয়ে নেয়ার লোভে মানুষকে লোভাতুর করে তুলেছন। উভয় ধারার কেউ অন্যদেরকে সূফী ও ফানাফিল্লাহ বানিয়েছেন। আর কেউ ধূর্ত রাজনীতিক ও সশস্র যোদ্ধা বানিয়েছেন। এজন্যেই অনেকে জীবন হাতের মুঠয় নিয়ে অন্যকে হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুসলমানকে আত্মঘাতী বোমা মারতেও তার শঙ্কা হয়না। আল্লাহর ইসলাম এর কোণটাই সমর্থন করেনা।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ- البقرة/214
তোমরা কি মণে করেছ যে, অতীতের ইমানদার গণের মত ঝুঁকি না সামলিয়ে, নানাবিধ জ্বালা যন্ত্রণা মেনে না নিয়ে, কাফের মূশরিক ও মুনাফিকদের টিটকারি বিদ্রূপ সহ্য না করে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৈন্যতাকে বরণ না করে জান্নাতে প্রবেশ করবে? তারা নানান যন্ত্রণার যাতাকলে পিষ্ট হয়েও তাদের রাসূলকে বলতে বাধ্য হয়েছেন আল্লাহর কাছে নিস্তারের দোয়া করতে, জিজ্ঞাসা করেছেন এমন অবস্থার অবসান কবে হবে? আর তখন বলা হয়েছে যে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে!- বাকারা/২১৪)।

ঙ) ইমানদারগনকে রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করে দেবেন এমন কথা আল্লাহ বলেননিঃ

সাহাবাগন সীমাহীন যাতনা বুকে ধারণ করেও আত্ম হত্যা করেননি, গুপ্ত হত্যা করেননি, আত্মঘাতী আক্রমণ করেননি। তাদেরকে আল্লাহ সফলতার বানী শুনিয়েছেন কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দেবেন এমন কথায়ও বলেন নি। যা বলেননি তা ‘বলেছেন’ বলে প্রচার করা আল্লাহর উপর মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। আর আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বানানোর চেয়ে বড় অন্যায় আর কিচু নেই! আস তাগফিড়ূল্লাহ!
সুরা নুর/৫৫ আয়াতে আল্লাহ খেলেফা/রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দেবেন বলেছেন এমন মনে করা ভুল। যা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তা মুমেন গন পেছেন। তবে কখনো কখনো অবস্থা খ্রাপ হয়ে যায় তা মুমেন দের কাজের ভুল ও দোষে।
সেই স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্ট শেয়ার হবেনা বলে ধারণা থাকলেও ঠিক তা-ই হয়েছে। দীর্ঘ ক্ষণ পরে ৫০০০ ফ্রেন্ডের মধ্যে মাত্র একজন লাইক দিয়েছিলেন। এমন বাস্তবতা কি আমাদেরকে ভাবীয়ে তোলে না? বুঝতে সহায়তা করেনা যে, কীভাবে মুসলমাণের মতিভ্রম সাধিত হয়েছে?
একদল বুঝিয়েছেন, ইসলাম হোল ইবাদাত; তাই যেভাবে পারা যায় সেভাবেই ভুল-শুদ্ধের তোয়াক্কা না করে শুধু এবাদাত করে যেতে হবে। আরেক দল শিখিয়েছেন, ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি দুই হাতে লূটে নিতে হবে। যেখানে আল্লাহ ইসলামকে বানিয়েছেন শুধু আখেরাতের ব্যবসা, সেখানে তারা বানিয়েছেন দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টির ব্যবসা। এর মানে আল্লাহ ইসলামকে যা বানাননি তারা তাই বানাতে তৎপর হয়েছেন। নেতা হয়ে সুনাম, সম্মান, প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও টাকা পয়সায় দুনিয়ার শীর্ষে থাকবেন। আর আখেরাতে জাণ্ণাতূল ফেরদাউসে গিয়ে বসে থাকবেন। এমনটি রাসূল সঃ এর পর ১৪০০ বছরের মধ্যেও কেউ বুঝেননি। বরং ৬০০ বছর ক্ষমতার মসনদে বসে মুসলমানগণ প্রমাণ করেছেন যে, দুনিয়া দরজা দিয়ে ঢুকলে আখেরাত জানালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে।

চ) এসব ভুল ধারনা মানুষ কোথায় পেল?

যুগ যুগ ধরে এই দুইটি ধাড়ার লোকেরাই ইসলামী জ্ঞানের সঞ্চালক হিসেবে নামে বেনামে কাজ করে আসছেন। যার ফলে মানুষ মণের অজান্তেই তাদের দর্শনে দর্শিত হয়ে গেছেন। লেখনী, বক্তৃতা, সেমিনার ও গণযোগাযোগের মাধ্যমে তারা এসব প্রচার করেছেন। মানুষ বুঝতে অক্ষম বলে এসবকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। কোন কথা ও কাজ তাদর কাজের সমালোচনা মূলক হলে লাইক মিলবে না, জিন্দাবাদ ও পাওয়া যাবে। বক্তৃতার মঞ্চে দাওয়াত মিলবে না, হয়তো গালি উপহার পাওয়ার যাবে, ক্ষেত্র বিশেষে ইট-পাটকেলও নিক্ষিপ্ত হতে পারে। অনেক দেরী হলেও এ সত্য গুলি আবিষ্কৃত হয়েছে।
আল্লাহর নবী সঃ এর সামনে যখন আসমান ও জমিন হাজীর করা হয়েছিল যখন দেখেছিলেন একজন নবী যার সাথে কেউ ছিলনা। রাসূল সঃ এর ঐ হাদিস থেকে সত্য হিসেবে বেরিয়ে আসে যে, যারা সত্য বলেন তাদেরকে মানুষ পছন্দ করেনা। এখনে সালেহ আঃ এর দাওয়াতি অভিজ্ঞতার আলোকে নৈরাশ্য বানী এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَٰكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ- الأعراف/79
ও আমার কামের লোকেরা তোমাদেরকে কতইনা আল্লাহর বানী পৌঁছে দিলাম, নসিহত করলাম কিন্তু অবশেষে এটাই আমার নিকট সত্য বলে সাব্যাস্ত হোল যে, তোমরা নসিহত কারীগনকে পছন্দ করনা।

No comments:

Post a Comment