Friday, July 18, 2014

আমি কেন কথিত আহলে হাদীস নইঃ ১ - ৫ কিস্তি


1) আমি কেন কথিত 'আহলে হাদীস" নই- ১ 

আমি একজন নগণ্য মানুষ। আমি আহলে হাদীস হলেও কিছু যায় আসেনা। আমি আহলে হাদিছ না হলেও কিছু যায় আসেনা। হাজারো মানুষ আহলে হাদিছ মতবাদে বিশ্বাসী। আমি আহলে হাদিছ মতবাদের সাথে সহমত পোষণ করিনা। আবার আমি এও জানি যে, আমি সহমত পোষণ করলেও কিছু যায় আসেনা। আমি সহমত পোষণ না করলেও কিছু যায় আসেনা। তবে আমি মুসলমান। আমি মুসলমান হওয়ার জন্য যা কিছু মানতে হয় সব কিছু মানী ও বিশ্বাস করি। বর্তমান বিশ্বর মুসলমান গণ যত নামে পরিচিত, তার মধ্যে একটি হল আহলে হাদিছ। আরও যত নাম আছে, সবগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করব না। কারণ সবগুলো এখানের আলোচ্য বিষয় নয়।
তাদের দাবী অনুযায়ী আহলে হাদিছ মানে যারা রাসুল সা এর সহিহ হাদিছসমুহ মেনে চলে। আমি আহলে হাদিছ নই। তাহলে আমি কি মেনে চলিনা? এ একটি প্রশ্ন আমার মনে জেগে ওঠে। আমার মন আমার কাছে জানতে চায়। আমি আমার মনকে বুঝাতে চেষ্টা করি। আমি আমার মনকে যা বুঝাই, তাই এখানে পর্জায়ক্রমে পরিবেশিত হবে। উদ্দেশ্য বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে নিজের ভুল সংশোধন করা। আকিদা চাপিয়ে দেয়া কিংবা কারো বিশ্বাস পরিবর্তন করা সম্ভবও নয়, উদ্দেশ্যও নয়।
( রুহুল্লাহ নোমানী ভাইয়ের লিখা থেকে)

2) আমি কেন কথিত 'আহলে হাদীস" নই-২

মানুষের জীবনে পরিবার পরিবেশের প্রভাব খুবই প্রকট। মানব শিশু সর্ব প্রথম শিক্ষা লাভ করে তার পরিবারের সদস্যদের থেকে। সে ধীরে ধীরে বড় হয় আর তার চার পাশের পরিবেশ থেকে সে গ্রহণ করতে থাকে। এভাবে সে ধীরে ধীরে সম্বৃদ্ধ হতে থাকে।
আমি জন্মেছি, বড় হয়েছি হানাফি পরিবারে, হানাফি পরিবেশে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমার ওপর হানাফিয়াতের প্রভাব পড়েছে। সুতরাং বলা চলে আমি আহলে হাদিছ নই। এর অন্যতম কারণ আমি জন্ম সুত্রে, পরিবার সুত্রে, পরিবেশ সুত্রে হানাফি।
আমার এ কথার ওপর হয়তো আহলে হাদিছ বন্ধুরা হাত তালি দিতে থাকবেন। বলবেন- নির্বোধ কাকে বলে দেখো। এরপর কুরআন শরীফ থেকে অনেক গুলি আয়াত পেশ করে বলবেন- দেখো কুরআন কি বলে আর এ লোক কি বলে? আসলে এরা মুখে নিজেকে মুসলমান দাবী করলেও এখনো বাপ দাদার পুজা ছাড়তে পারেনি। মুসলমান আনুগত্য করবে আল্লাহ ও রাসুল সা. এর। জন্ম, পরিবার, পরিবেশ আবার কি?
আহলে হাদিছ বন্ধুদের দুর্বলতার থেকে এটিও একটি। তারা অর্ধেক দেখে। বাকি অর্ধেক দেখেনা। আমার এক সহপাঠীর থেকে শোনা একটি কৌতুক মনে পরে গেল। একজন পরিদর্শক গেছেন স্কুল পরিদর্শনে। পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার নাম কি? ছাত্র জবাব দিল- মির্জা ফর...... এতটুকু বলতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- তোমাদের মধ্যে কে বলতে পারবে গাদ্দার মির জাফরের ইতিহাস? ছাত্ররা চুপ। তিনিই বলতে লাগলেন- মির জাফর হল বাঙ্গালী জাতির সবচে নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতকের নাম। সে........................ কথা থামিয়ে দিয়ে ওই ছাত্র বলল- স্যার, আপনি তো অর্ধেক শুনেই বলতে শুরু করলেন। আমাকে তো পুরো নামটাও বলতে দিলেন না। আমার নাম মির্জা ফরহাদ। স্যার তখন আবুল গোত্রের সদস্য হয়ে গেলেন।
যাক। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন- শুধু আমরা নই। অনেক সাহাবাও জন্ম সুত্রে মুসলমান ছিলেন। যেমন সাহাবী নুমান ইবনে বাশির রা। বলবেন- হানাফি তো ছিলেন না! হ্যাঁ, তিনি এবং তার মতো অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম হানাফি যেমন ছিলেন না। কথিত আহলে হাদিছও ছিলেন না। কিন্তু জন্ম সুত্রে আহলে হাদিছ কি কেউ নেই? অতি তর্ক প্রিয় কেউ বলতে পারেন- হানাফি তো আর না! কি আর জওয়াব? হানাফি হলেই সব মাকরূহ হয়ে যায়।
দেখুন, জন্ম সুত্রে কিংবা পরিবার ও পরিবেশ সুত্রে কোন ধর্ম বা মাজহাবের অনুসারী হওয়া দোষণীয় নয়। যদি ভিত্তি ঠিক থাকে। আমি এ কথা বলিনি যে, হানাফি মাজহাবের ভিত্তি নড়বড়ে। তবুও আমি জন্ম, পরিবার ও পরিবেশের কারণে হানাফি। তাহলে তাদের আপত্তি ও আহলে কিতাব যাজকদের সম্বন্ধিয় আয়াত ও হাদিছগুলোর সু প্রয়োগ হতো। বরং আমার দাবী বরং বাস্তবতা হল- হানাফি মাজহাব সুগভির ও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। আমি এ মাজহাবের অনুসারী, এটা আমার প্রতি আমার আল্লাহর করুণা। আমার পরিবার, পরিবেশ ও আমার জন্ম আমাকে এ মাজহাবের অনুসারী হতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে মাত্র।
( রুহুল্লাহ নোমানী ভাইয়ের লিখা থেকে)

3) আমি কেন কথিত আহলে হাদীস নই-৩

আহলে হাদীস ভাইদের অনেকেই এই আয়াত পেশ করেন
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ (170) سورة البقرة
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, অনুসরণ কর যা আল্লাহ অবতির্ণ করেছেন। তারা বলে- বরং আমরা অনুসরণ করবো যার ওপর আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পুর্ব পুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছু বুঝত না এবং হেদায়াত প্রপ্তও ছিলোনা। ( সুরা-বাক্বারা, আয়াত-১৭০ )
এটি একটি দলগত প্রশ্ন ও দলগত সমস্যা। তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার দাবী রাখে।
তাদের দৃষ্টিতে এটি একটি অব্যর্থ অস্ত্র। তারা মনে করেন এর কোন সদুত্তর মাজহাবের অনুসারীদের নিকট নেই। মুকাল্লিদরা এ প্রশ্নেই কুপোকাত।
প্রথম কথা হল, সাহাবায়ে কেরামকে জড়িয়ে এ জাতীয় প্রশ্ন করার নীতিগত কোন অধিকার আহলে হাদিছের নেই। কারণ তারা শুধু ব্যক্তি সাহাবাকে নয়। সাহাবায়ে কেরামের ইজমাকেও অমান্য করে। তাদের তারাবীহ আট রাকাআত, তারা তিন তালাক দিলেও তা গণ্য হবে এক তালাক। তারা জুমুয়ার নামায আদায় করে এক আযানে। ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তারা গোটা উম্মত থেকে আলাদা। এখন সাহাবায়ে কেরাম প্রচলিত মাজহাব চতুষ্টয়ের কোনটিরই অনুসারী ছিলেন না। এ কথা সত্য। কারণ মাজহাবের প্রচলন ই হয়েছে তাদের পরে। কেন হল, কিভাবে হল? এর শরঈ ভিত্তিই বা কি? এ আলাদা প্রশ্ন। আলাদা প্রসঙ্গ। এ সবের জন্য আলাদা আলোচনা প্রয়োজন। ইন শা আল্লাহ আলাদা ই আলোচনা করা হবে। কিন্তু যদি সাহাবায়ে কেরাম মাজহাব মানতেন, তাহলেই কি তারা মানতেন? যদি উত্তর হয়- হ্যাঁ। তাহলে উপরোক্ত মাসআলা সমূহে তো সাহাবায়ে কেরামের ইজমা হয়েছে। মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? এরপর যখন আমরা কোন কোন অতি উৎসাহী বা ভারসাম্যহীন আহলে হাদিছের মুখে শুনি- আমরা ওমরী বিদআত, উসমানী বিদআত মানব কেন? তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকেনা যে, সাহাবায়ে কেরাম যদি কোন মাজহাবের অনুসারী হতেনও, তারা তাদের ইমামদের অনুসরণে সাহাবায়ে কেরামকে পাশ কেটে যেতেন। উপরোক্ত মাসআলা সমূহে যেমন করেছেন। তখনও সাহাবায়ে কেরামের শানে বেয়াদবি মূলক মন্তব্য করতেন, যেমনটা উপরের মাসআলা সমূহে করেছেন। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম মাজহাব মানতেন কি মানতেন না? এ তর্ক অবান্তর। এ প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। বরং আমরা তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে পারি- সাহাবায়ে কেরাম কি নিজেদেরকে আহলে হাদিছ, সালাফি বলে দাবী করতেন? এসব নামে নিজেদের পরিচয় দিতেন? যদি উত্তর হ্যাঁ সুচক হয় তো
هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (111)سورة البقرة
দলীল নিয়ে আসুন। তারা ইতিহাস ও পরিভাষার বিকৃতি করতে পারবেন, কিন্তু এর সদুত্তর দিতে পারবেন না। আমি নিশ্চিত।
(মুফতী রুহুল্লাহ নোমানী ভাইয়ের লিখা থেকে)

4) আমি কেন কথিত আহলে হাদীস নই-৪

রাসূল সা. কোন মাজহাবের অনুসারী ছিলেন ? এটাও তাদের একটি প্রশ্ন এবং তাদের ধারণা মতে এ প্রশ্নও অব্যর্থ এবং মুকাল্লিদরা এ প্রশ্নের উত্তর দানে ব্যর্থ । কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন । রাসুল সা. কোন মাজহাবের অনুসারী ছিলেন না । এটি যেমন সত্য, রাসুল সা. আহলে হাদিছও ছিলেন না । এটাও সত্য । মাজহাবের জন্ম হয়েছে রাসুল সা. এর তিরোধানের অনেক পরে । আর আহলে হাদিছের তো জন্ম হয়েছে আরও অনেক পরে, এই সেদিন । আহলে হাদিছ, সালাফি এবং এ জাতীয় যত নামে তারা সুযোগ সুবিধা মতো নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে, পরিভাষা হিসাবে তো এ সবের জন্মই হয়নি রাসুলের আমলে । তো ? অর্ধেক বুঝলে হবেনা । পুরোটা বুঝতে হবে । সুতরাং কোন মাজহাবের অনুসারী ছিলেন ? এ প্রশ্ন তারা ওই দিন করতে পারবে, যেদিন তারা প্রমাণ করতে পারবে যে, রাসুল সা আহলে হাদিছ ছিলেন । কিন্তু রাসুল সা আহলে হাদিছ ছিলেন, সুস্থ স্বজ্ঞানে কোন আহলে হাদিছ এমন দাবী করবেনা । কারণ বুঝ, বিবেচনা ও ইনসাফ দুনিয়া থেকে একদম হারিয়ে যায়নি, আশা করি । আর যদি কেউ দাবী করেও বসে, প্রমাণ করতে পারবেনা । আমি নিশ্চিত । এ জন্য তারা আহলে হাদিছ, সালাফি ইত্যাদি নাম ধারণের পর এখন নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করেছে ‘আমি মুসলিম' . তাহলে আগে কি ছিল ? আল্লাহ মালুম । ভণ্ডামিরও তো একটা সিমারেখা আছে!
আহলে হাদিছ একটি যৌগিক শব্দ । যা আহল ও হাদিছ’ এর সমন্বয়ে গঠিত । রাসুল সা এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে হাদিছ বলা হয় । ব্যাপক অর্থে সাহাবায়ে কেরামের কথা, কাজ, সম্মতিও হাদিছ পরিভাষার অন্তর্গত । হাদিছ সহিহ, হাসান, জঈফ, মওজু ইত্যাদি প্রকারে বিভক্ত । আহল’ শব্দের অর্থ একাধিক । আমরা আপাতত তাদের অর্থই গ্রহণ করব । পরবর্তিতে কোন এক সময় ‘আহলে হাদিছ’ এর প্রকৃত অর্থ নিয়ে আলোচনা করব, ইন শা আল্লাহ । তারা বলে- ‘আহলে হাদিছ’ মানে হাদিছের অনুসারী । কোন হাদিছের অনুসারী- সহিহ, জঈফ, মওজু ? আমরা ধরে নিলাম- সহিহ হাদিছের অনুসারী। কারণ আমরা উসুলের কিতাবে একটি কায়দা পড়েছি
المطلق إذا أطلق أريد به الفرد الكامل
‘শব্দ যদি মুক্ত, অর্থ হবে পূর্ণ’. যেমন পানি দাও । যেহেতু ভাল খারাপের বিশেষণ থেকে মুক্ত, ভাল পানিই দিতে হবে । সুতরাং যত আহলে হাদিছ আছে, সব সহিহ হাদিছের অনুসারী । শুধু সহিহ হাসিছের অনুসারী । এ কিন্তু বাস্তবতা নয় । তাদের দাবী মাত্র । আমরা এখানে মেনে নিয়েছি এ কথা যাচাই করার জন্য যে, আমাদের মতে আহলে হাদিছের যা অর্থ সে হিসাবে নয় । অন্তত তাদের নিকট আহলে হাদিছের যা অর্থ, সে হিসাবেও রাসুল সা আহলে হাদিছ ছিলেন কিনা ?
রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দু’দলে বিভক্ত । কেউ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী ও জিয়ার অনুসারী। আবার কেউ মুজিবের আদর্শে বিশ্বাসী ও মুজিবের অনুসারী । এখন যদি তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, জিয়া ও মুজিব কি তাদের আদর্শের অনুসারী ছিলেন ? কেউ কেউ হয়তো বলেও বসবেন- হ, ছিলেন তো । এটা বুঝের কমতি ও আবেগের অতিশয্য । এটা বাস্তব নয় । এর দ্বারা তাদের মর্যাদা খাট করা হয়েছে । কারণ অনুসারির চেয়ে প্রবর্তকের মর্যাদা বেশী । কিন্তু আবেগি অনুসারী প্রবর্তক কেও অনুসারী দাবী করে নিজের কাতারে নিয়ে এসেছে । না বুঝলে যা হয়, তাই আরকি ।
এ ছিল উদাহরণ মাত্র । এখন কেউ যদি দাবী করে যে, আমরা রাসুল সা থেকে যত হাদিছ ও আদর্শ গ্রহণ করেছি, রাসুল সা.ও সে সবের অনুসারী ছিলেন । তার বিবেক বুদ্ধিই তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে । এমন দাবীর দ্বারা সরল মানুষ কে ধোঁকা দেয়া ছাড়া এর কোন বাস্তবতা নেই । কোন বিবেকবান মানুষ এমন দাবী কোনক্রমেই মেনে নিতে পারেন না ।
রাসুল সা যা বলেছেন, তা-ই হাদিছ । রাসুল সা যা করেছেন, তা-ই হাদিছ । রাসুল সা যার সম্মতি দিয়েছেন, তা-ও হাদিছ । রাসুল সা প্রবর্তক । রাসুল সা কেন অনুসারী হবেন ? অনুসারির কোন অধিকার থাকেনা । কিন্তু রাসুল সা এর অধিকার ছিল রদ বদল করার । এ কারণেই হাদিছ দ্বারা হাদিছ মানসুখ হয়ে যায় । কিন্তু অনুসারী পারেনা কোন কিছুকে রহিত করতে । এখন কেউ যদি রাসুল সা কে নিজের সমান্তরালে নিয়ে আসতে চায়, গণতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতার যুগে আমাদের কি করার আছে ! তবে তার খেদমতে এতটুকু আরয করতে পারি, আপনি আমার ভাই । দুনিয়া আখেরাতে আপনার অভিপ্রায় সফল হবেনা। উল্টো আপনিই ধিকৃত হবেন । তাই ফিরে আসুন সত্যের পথে । রত থাকুন সত্যের সন্ধানে ।
যাহোক, রাসুল সা মাযহাবপন্থি ছিলেন কিনা ? বা কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ? এমন প্রশ্ন করার কোন নৈতিক অধিকার আহলে হাদিছের নেই । রাসুল সা মাযহাবের অনুসারিও ছিলেন না । রাসুল সা আহলে হাদিছও ছিলেন না । এখন তারা আহলে হাদিছ । আর আমরা মাযহাব মানি । এর কোনটার কি শরঈ ভিত্তি ? তা নিরূপণ করতে হবে এবং করতেই হবে । আমরা অনুসন্ধান করে দেখব, আহলে হাদিছ নাম ধারণ করে সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধাচারণ এবং সালাফি নাম ধারণ করে সালাফের বিরোধিতা কোন হাদিছের আলোকে ? তবে পর্যায়ক্রমে, ইন শা আল্লাহ ।
(মুফতী রুহুল্লাহ নোমানী ভাইয়ের লিখা থেকে)

5) আমি কেন কথিত আহলে হাদীস নই-৫


আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে। আয়াতটি হল
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ (170) سورة البقرة
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, অনুসরণ কর যা আল্লাহ অবতির্ণ করেছেন। তারা বলে- বরং আমরা অনুসরণ করবো যার ওপর আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পুর্ব পুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছু বুঝত না এবং হেদায়াত প্রাপ্তও ছিলোনা। ( সুরা-বাক্বারা, আয়াত-১৭০ )

এবার তাহলে এ প্রসঙ্গেও কিঞ্চিত আলোচনা করা যাক। প্রথমেই আসা যাক আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে । আল্লামা ইবনে কাছির রহ. বলেন-
وروى ابن إسحاق عن محمد بن أبي محمد، عن عكرمة أو سعيد بن جبير، عن ابن عباس: أنها نزلت في طائفة من اليهود، دعاهم رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الإسلام، فقالوا: بل نتبع ما ألفينا عليه آباءنا. فأنزل الله هذه الآية.
ইবনে ইসহাক < মুহাম্মাদ ইবনে আবি মুহাম্মাদ < ইকরিমা বা সাঈদ ইবনে যুবাইর < ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণনা করেন যে, আয়াতটি ইয়াহুদিদের একটি দল সম্পর্কে অবতির্ণ হয়েছে । তাদেরকে রাসুল সা ইসলামের দিকে ডেকেছিলেন। উত্তরে তারা বলেছিল- না । বরং আমরা অনুসরণ করব, যার ওপর আমরা আমাদের বাপ-দাদা কে পেয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন । ( তাফসিরুল কুরআনুল আযীম )
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছির রহ বলেন-
يقول تعالى: { وَإِذَا قِيلَ } لهؤلاء الكفرة من المشركين: { اتَّبِعُوا مَا أَنزلَ اللَّهُ } على رسوله، واتركوا ما أنتم فيه من الضلال والجهل، قالوا في جواب ذلك: { بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا } أي: وجدنا { عَلَيْهِ آبَاءَنَا } أي: من عبادة الأصنام والأنداد. قال الله تعالى منكرًا عليهم: { أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ } أي: الذين يقتدون بهم ويقتفون أثرهم { لا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلا يَهْتَدُونَ } أي: ليس لهم فهم ولا هداية!!.
ওইসব কাফেরদের কে যখন বলা হল, তোমরা অনুসরণ করো, যা আল্লাহ তাঁর রাসুলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন এবং অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা বর্জন করো । তারা প্রতি উত্তরে বলল- না । বরং আমারা অনুসরণ করবো, যার ওপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি । অর্থাৎ আমরা মুর্তি পূজা ও অংশিদারিত্বের আক্বিদা অব্যাহত রাখবো। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের অবস্থান কে খণ্ডন করে বলেন- যদিও তাদের বাপ-দাদারা, যাদের তারা অনুসারী, কিছু না বোঝে এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত নাও হয় । ( ওই )

ইবনে কাছির রহ এর আলোচনা থেকে আমরা যা অবগত হলাম-
১. আয়াতটি অভিশপ্ত ইয়াহুদিদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে ।
২. কারণ তারা রাসুল সা এর দাওয়াতের প্রতি উত্তরে ইসলাম কে প্রত্যাখ্যান করেছিলো ।
৩. এবং শিরক ও মুর্তি পূজাকে ইসলামের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছিলো।
৪. আর এ ক্ষেত্রে তারা তাদের বাপ-দাদাকে আদর্শ মেনেছিল।
৫. কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা বুঝ ও হেদায়াত থেকে বঞ্চিত ছিল।

আমার প্রিয় বন্ধু ( আল্লাহ তাদেরকে বুঝ ও হেদায়াত দান করুন । আমীন। ) এ আয়াত টিকে মাযহাব পন্থী মুক্বাল্লিদগণের ওপর প্রয়োগ করেছেন । এর সরল অর্থ হল, মুক্বাল্লিদগণের মাঝে এ সব বিষয়াবলী উপস্থিত । এটা তার দাবী। কিন্তু এ দাবী কি বাস্তব ? অবশ্যই বাস্তব নয় । তাহলে এটা কি অপবাদ নয়? কুরআন-হাদিছ কি আমাদের কে কারো ওপর অপবাদ আরোপের অনুমতি দেয় ? অবশ্যই দেয় না । অন্য কাউকে যেমন ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ? না, তাদের কেও দেয়না। তাহলে তারা কোন হাদিছের অনুসারী ? কেমন আহলে হাদিছ ? এটা কি কুরআনের অপব্যাখ্যা-অপপ্রয়োগ নয় ? আল্লাহ-ই হিদায়াতের মালিক । আমরা আল্লাহর নিকট হিদায়াতের প্রার্থনা করছি।

(মুফতী রুহুল্লাহ নোমানী ভাইয়ের লিখা থেকে)  Source LINK 

No comments:

Post a Comment