Wednesday, January 8, 2014

মুরতাদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা করার শাস্তি
লিখেছেন : মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী




একজন মুসলমানের কাছে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের প্রাণের চেয়ে, নিজের সন্তানের চেয়ে, নিজের মা-বাবার চেয়ে এবং তার যাবতীয় সম্পদ থেকে প্রিয়। যদি কোন ব্যক্তির এমন মুহাব্বত না থাকে, তাহলে লোকটি প্রকৃত মুসলমান নয়। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে--
عن أنس قال قال النبي صلى الله عليه و سلم : لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না--যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশী মুহাব্বত করবে।” ( (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭)

নাস্তিকতা এক জিনিস, আর ধর্মকে কটাক্ষ করা, রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগাল দেয়া, অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা ভিন্ন জিনিস। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে থাকে, কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীরা ধর্মদ্রোহিতার মাধ্যমে মানুষকে ভ্রান্ত পথে প্ররোচিত করে মহা-অপরাধ করে। তাই তারা যিনদীক-ধর্মাপরাধী। আর বিশেষ করে যারা মুসলমান নাম ধারণ করে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে যারা গালী দেয়, অপমানিত করে, অসম্মানজনক কথা বলে বা লিখে, তারা মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী-ধর্মাদ্রোহী সাব্যস্ত হয়। ইসলামের শরীয়তে তাদের সম্পর্কে বিধান হলো, তারা তাওবা না করলে, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হত্যা করা হবে। এরকম কুলাঙ্গারদের এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

এ ধরনের মুরতাদ-ধর্মদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান শুধু ইসলামে নয়, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মেও আছে। সকলের অবগতির জন্য নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করা হলো।

ইয়াহুদীদের ধর্মে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড -------------------------------------

ইয়াহুদীদের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে--“দুনিয়ার এক সীমানা থেকে অন্য সীমানা পর্যন্ত তোমার কাছের বা দূরের লোকেরা যারা দেব-দেবীর পূজা করে, তারা তোমার এবং তোমার পূর্বপুরুষদের অজানা সেই সব দেব-দেবীর দিকে যদি তোমার নিজের ভাই কিংবা তোমার ছেলে বা মেয়ে কিংবা প্রিয় স্ত্রী কিংবা তোমার প্রাণের বন্ধু তোমাকে একা পেয়ে বিপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে, “চল আমরা গিয়ে দেব-দেবীর পূজা করি”, তবে তার ডাকে সাড়া দিও না বা তার কথায় কান দিয়ো না। তাকে কোন দয়া দেখাবে না। তাকে রেহাই দিবে না। কিংবা তাকে রক্ষা করবে না। তাকে হত্যা করতেই হবে। তাকে হত্যা করাবার কাজে তুমি নিজের হাতেই শুরু করবে। তারপর অন্য সবাই যোগ দেবে। যিনি তোমাকে মিসর দেশের গোলামী থেকে বের করে এনেছেন তোমার সেই মাবুদ আল্লাহর দিক থেকে সে তোমাকে ফিরাবার চেষ্টা করেছে বলে বলে তাকে তুমি পাথর ছুড়ে হত্যা করবে। তাতে বনী ইসরাঈলরা সকলে সেই কথা শুনে ভয় পাবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ আর এই রকম খারাপ কাজ করবে না।” (বাংলা কিতাবুল মুকাদ্দাস, পৃষ্ঠা ২৪২, তাওরাত, দ্বিতীয় বিবরণ, ১৩ পরিচ্ছেদ : ৬-১ অনুচ্ছেদ)


খৃষ্টানদের ধর্মে মুরতাদের শাস্তি ---------------------------------

খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে রয়েছে--“মুরতাদ হওয়া ক্ষমার অযোগ্য গুনাহ। হত্যা ও জিনাকারীর স্থলাভিষিক্ত।” (উদ্ধৃত : এনসাইক্লোপেডিয়া, রিলিজিওন অধ্যায়, ইন্ডিয়া এডিশন, ৬ নং খন্ড)
খৃষ্টানদের এ সংক্রান্ত কালচার সম্পর্কে বলা হয়েছে--“ইংল্যান্ডে এক খৃষ্টান পাদ্রী ইয়াহুদী এক মহিলাকে বিয়ে করার জন্য স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করার কারণে অক্সফোর্ডে তাকে ১২৩২ ঈসাব্দের ১৭ই এপ্রিল প্রকাশ্যে জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়।” (এনসাইক্লোপেডিয়া, রিলিজিওন অধ্যায়, ইন্ডিয়া এডিশন, ৬ নং খন্ড ৬৪৪পৃষ্ঠা)


  ইসলামে মুরতাদের শাস্তি ---------------------


মহান আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ইসলামধর্মকে অবমাননার
শাস্তির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের বর্ণনা--

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারীর উপর আল্লাহর অভিশম্পাত বর্ষিত হবে এবং তাদের পরকালে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন--
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا [٣٣:٥٧]
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৫৭)

তারপর তাদের হত্যার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন--

مَلْعُونِينَ ۖ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا [٣٣:٦١] سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ ۖ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا [٣٣:٦٢]
“অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাদেরকে ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে চলে গিয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৬১-৬২)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন--
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٩:١١]وَإِنْ نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ مِنْ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُونَ [٩:١٢]أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُمْ بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ [٩:١٣]
“তবে তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তখন তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। আর যদি তারা ভঙ্গ করে তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তাহলে সেই কুফরনেতৃত্বের সাথে লড়াই কর। কারণ, এদের কোন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে। তোমরা কি সেই দলের সাথে লড়াই করবে না--যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রাসূলকে বহিষ্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহÑযদি তোমরা মুমিন হও।” (সূরাহ তাওবা, আয়াত নং ১১-১৩)

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) এ আয়াতের দ্বারা দলীল দিয়ে বলেন--“যে ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে বা কুরআনের বিরুদ্ধে খারাপ উক্তি করে অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যাপারে অবমাননাকর কথা বলে, ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে।” (মাহাসিনুত তাওয়ীল, ৫ম খণ্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা) উক্ত মুরতাদকে হত্যা করার হুকুম কার্যকর করবে রাষ্ট্র। এটা ইসলামের অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় বিধান। (কুতুবুল ফিক্বহ দ্রষ্টব্য)

মুরতাদের শাস্তির ব্যাপারে হাদীসের বর্ণনা--

কোন মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অবমাননা করলে বা তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলে, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাফির-মুরতাদ হয়ে যায়। তখন সে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হয়ে যায়। নিম্নে এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করা হলো--

হাদীস--১ :
عن عبد الله قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث النفس بالنفس والثيب الزاني والمفارق لدينه التارك للجماعة )
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ হবে না যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তবে শুধু তিনটি কারণে তা বৈধ হবে : এক. যদি সে কাউকে হত্যা করে, তার বদলায় (কিসাস স্বরূপ) তাকে হত্যা করা হবে। দুই. যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে, তাহলে (শরয়ী হদ হিসেবে) তাকে হত্যা করা হবে। তিন. যদি কেউ (আল্লাহ, রাসূল, কুরআন বা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে) স্বীয় দ্বীন (ইসলাম) হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মুসলমানদের সমাজকে পরিত্যাগ করে, তাকে (মুরতাদ হওয়ার কারণে) হত্যা করা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭৬)

হাদীস--২ :
عن عكرمة قال : أتي علي رضي الله عنه بزنادقة فأحرقهم فبلغ ذلك ابن عباس فقال لو كنت أنا لم أحرقهم لنهي رسول الله صلى الله عليه و سلم لا تعذبوا بعذاب الله . ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه و سلم من بدل دينه فاقتلوه
অর্থ : হযরত ইকরিমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী (রা.)-এর নিকট ধর্মত্যাগী যিনদীকদেরকে উপস্থিত করা হল। তখন তিনি (রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে) তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলে মৃত্যুদ- দিলেন। এ সংবাদ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে, তিনি বললেন, “যদি আমি হতাম, তাহলে তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ নিষেধাজ্ঞা কারণে যে, তিনি বলেছেন  “তোমরা আল্লাহর শাস্তি (জাহান্নামের আগুন) দিয়ে শাস্তি দিওনা।”  আর অবশ্যই আমি তাদেরকে (অন্য প্রক্রিয়ায়) হত্যা করতাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ নির্দেশের কারণে যে, তিনি বলেছেন “যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন (ইসলাম) কে পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করো।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২১/ সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬০৬/ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৫৩)

হাদীস--৩ :
قالت عائشة أما علمت أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : لا يحل دم امرئ مسلم إلا رجل زنى بعد إحصانه أو كفر بعد إسلامه أو النفس بالنفس
অর্থ : হযরত আয়িশা (রা.) বলেন, তুমি জান না যে, রাসূলুুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেনÑ“কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয় এ কারণ ব্যতীত যে, কোন বিবাহিত ব্যক্তি যদি যিনা করেÑতখন (রজম-দ-ে) তাকে হত্যা করা হবে অথবা কেউ মুসলমান থাকার পর যদি (মুরতাদ হয়ে) কুফরী করে, তখন তাকে হত্যা করা হবে কিংবা কেউ কাউকে হত্যা করলে, তার বদলায় তাকে হত্যা করা হবে।” (সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং ৩৪৮০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং ৩১৫৩)

হাদীস--৪ :
عن أبي بردة بن أبي موسى الأشعري عن أبيه : أن النبي صلى الله عليه و سلم بعثه إلى اليمن ثم أرسل معاذ بن جبل بعد ذلك فلما قدم قال أيها الناس إني رسول رسول الله صلى الله عليه و سلم إليكم فألقى له أبو موسى وسادة ليجلس عليها فأتي برجل كان يهوديا فأسلم ثم كفر فقال معاذ لا أجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فلما قتل قعد
অর্থ--হযরত আবু বারদাহ্ ইবনে আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি স্বীয় পিতা থেকে রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইয়ামানে (গভর্ণর করে) পাঠালেন। অতঃপর তাঁর সেখানে যাওয়ার পরে হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.)কে পাঠালেন। যখন মু‘আয (রা.) আগমন করলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেনÑ“হে লোকসকল! আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত। সে সময় হযরত আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) তাঁর জন্য একটি আসন বিছালেন, যেন তিনি তাতে বসেন। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তিকে আনা হলো--যে ইয়াহুদী ছিল, অতঃপর মুসলমান হয়েছে, তারপর আবার মুরতাদ হয়ে গিয়েছে। তখন মু‘আজ ইবনে জাবাল (রা.) তিনবার বললেন, “আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বসবো নাÑযতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের ফয়সালা অনুযায়ী এই লোককে হত্যা করা না হবে।” তারপর যখন তাকে হত্যা করা হল, তখন বসলেন। (সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস নং ৩৫২৯)

হাদীস--৫ :
عن عائشة قالت : ارتدت أمرأة يوم أحد فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن تستتاب فإن تابت وإلا قتلت
অর্থ : হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ“উহুদ যুদ্ধের দিন এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দেন যে, তাকে তাওবা করাতে বলা হোক। এতে যদি সে তাওবা করে, তাহলেতো ভালো, অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে।” (সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং ১২১, সুনানে বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ১৬৬৪৫, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১৮৭২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২৯৬০৭)

হাদীস--৬ :
عن جابر أن امرأة يقال لها أم مروان ارتدت عن الإسلام فأمر النبي صلى الله عليه و سلم أن يعرض عليها الإسلام فإن رجعت وإلا قتلت
অর্থ : হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, এক মহিলা তার নাম উম্মে মারওয়ান সে ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেন যে, “তার কাছে ইসলাম পেশ করা হবে। যদি সে ফিরে আসে তো ভাল, নতুবা তাকে হত্যা করা হবে।” (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ১৬৬৪৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং ১২২)
এভাবে মুরতাদ হওয়ার ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু মুরতাদ হওয়ার কারণেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর সাথে বিদ্রোহ প্রমাণিত হওয়াকে বিবেচনা করা হয় নি। কেননা, মুরতাদ হওয়াটাই একপ্রকার বিদ্রোহ বা ধর্মদ্রোহরূপে গণ্য। তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অবমাননা করাটাও দ্বীনের বিষয়ে বিদ্রোহরূপে পরিগণিত। তাই শুধু এর কারণেই সে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হয়ে যায়।

এ সম্পর্কে নিম্নের হাদীসগুলো লক্ষ্য করুন--

হাদীস--৭ :
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--
من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه
“যে ব্যক্তি কোন নবীকে নিন্দাবাদ করে, তাকে হত্যা কর। আর যে আমার সাহাবীদেরকে নিন্দাবাদ করে, তাকে প্রহার কর।” (জাম‘উল আহাদীস, হাদীস নং ২২৩৬৬, জাম‘উল জাওয়ামি‘, হাদীস নং ৫০৯৭, দাইলামী, ৩য় খ-, ৫৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৬৮৮)

বি. দ্র. سب (ছাব্ব) অর্থ-নিন্দাবাদ-এর সংজ্ঞা
আরবী অভিধানে ছাব্ব (নিন্দাবাদ) বলা হয় কোন বিষয়ে এমন কথা বলা, যার দ্বারা উক্ত বিষয়ে তার দোষ ও দুর্বলতা প্রকাশ পায়। (মিরকাত)
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেনÑ“যে কথা সমাজে মন্দ ও দোষ-ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তা-ই ছাব্ব বা নিন্দাবাদের অন্তর্ভুক্ত।” (আস-সারিমুল মাসলূল, ৫৩৪ পৃষ্ঠা)

হাদীস--৮ :
ابن عباس أن أعمى كانت له أم ولد تشتم النبى -صلى الله عليه وسلم- وتقع فيه فينهاها فلا تنتهى ويزجرها فلا تنزجر - قال - فلما كانت ذات ليلة جعلت تقع فى النبى -صلى الله عليه وسلم- وتشتمه فأخذ المغول فوضعه فى بطنها واتكأ عليها فقتلها فوقع بين رجليها طفل فلطخت ما هناك بالدم فلما أصبح ذكر ذلك لرسول الله -صلى الله عليه وسلم- فجمع الناس فقال ্র أنشد الله رجلا فعل ما فعل لى عليه حق إلا قام গ্ধ. فقام الأعمى يتخطى الناس وهو يتزلزل حتى قعد بين يدى النبى -صلى الله عليه وسلم- فقال يا رسول الله أنا صاحبها كانت تشتمك وتقع فيك فأنهاها فلا تنتهى وأزجرها فلا تنزجر ولى منها ابنان مثل اللؤلؤتين وكانت بى رفيقة فلما كانت البارحة جعلت تشتمك وتقع فيك فأخذت المغول فوضعته فى بطنها واتكأت عليها حتى قتلتها. فقال النبى -صلى الله عليه وسلم- ্র ألا اشهدوا أن دمها هدر
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ সাহাবীর একজন উম্মে ওয়ালাদ বাঁদী ছিল। সে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগাল ও সমালোচনা করতো। অন্ধ সাহাবী তাকে নিষেধ করেন, কিন্তু সে নিষেধ অমান্য করে এবং তিনি তাকে হুমকি দেন, তাতেও সে বিরত থাকে না। বর্ণনাকারী বলেন, একদা রাতে বাঁদীটি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে সমালোচনা ও গালাগাল শুরু করে, তখন অন্ধ সাহাবী খঞ্জর নিয়ে তার পেটে ধরেন এবং তার উপর ভর দেন। ফলে বাঁদীটি মারা যায়। এমনকি তার দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে পেটের বাচ্চা বের হয়ে যায়। আর সেখানে যা কিছু ছিল সে রক্তে রঞ্জিত করে ফেলে। যখন সকাল হয়, বাঁদীটির এ অবস্থার কথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করা হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সবাইকে একত্র করেন এবং বলেন, যে এ কাজ করেছে, তাকে আল্লাহর কসম ও আমার উপর থাকা তার হকের কসম দিচ্ছি, সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। তখন সেই অন্ধ সাহাবী উঠলেন। অতঃপর তিনি লোকদের ভীড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বসলেন। অতঃপর বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সেই বাঁদীর সম্পর্কিত লোক। সে আপনাকে গালাগাল করতো, আপনার কুৎসা গাইতো। আমি তাকে এসব করতে বাধা দিতাম। কিন্তু সে বিরত হতো না এবং তাকে হুমকি-ধমকি দিতাম, তবু সে থামতো না। আর আমার হীরার টুকরোর মত দু’টি সন্তান তার গর্ভ থেকে আছে। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। এমনি করে যখন গতরাত এলো, সে আপনাকে গালাগাল শুরু করলো এবং আপনার কুৎসা গাইতে লাগলো। তখন আমি একটি খঞ্জর নিই এবং তাকে তার পেটে রাখি। তারপর তার উপর ভর দিয়ে তাকে হত্যা করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন--“লোকেরা! তোমরা সাক্ষী থাকো তার প্রাণবধ দায়মুক্ত।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৬৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং ১০৩, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস নং ১১৯৮৪, বুলুগুল মারাম, হাদীস নং ১২০৪)

উক্ত হাদীস উল্লেখ করে ‘বুলুগুল মারাম ফী আহাদীসিল আহকাম’ গ্রন্থে আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, “অন্ধ সাহাবীর এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তিকারীকে হত্যা করে দেয়া হবে। কেননা, পূর্বে সে মুসলমান হলেও রাসূলুল্লাহ (সা.)কে নিয়ে কটূক্তি করার দ্বারা সে মুরতাদ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তখন তাকে এত্থেকে তাওবা করার আহ্বান জানানোরও প্রয়োজন পড়ে না।” (বুলুগুল মারাম ফী আহাদীসিল আহকাম, ১৩৩ পৃষ্ঠা)

হাদীস--৯ :
عن جابر ابن عبد الله رضي الله عنهما يقول قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من لكعب بن الأشرف فإنه قد آذى الله ورسوله فقام محمد بن مسلمة فقال يا رسول الله أتحب أن أقتله ؟ قال ( نعم )
অর্থ : হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন--“কা‘ব বিন আশরাফের জন্য কে আছো? কেননা, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে।” তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮১১)

হাদীস--১০ :
عن أنس بن مالك رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم دخل عام الفتح وعلى رأسه المغفر فلما نزعه جاء رجل فقال إن ابن خطل متعلق بأستار الكعبة فقال اقتلوه
অর্থ : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করার সময় তাঁর মাথায় শিরস্ত্রাণ ছিলো। যখন তিনি মাথা থেকে তা খুললেন, সে সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন-- ইবনে খাতাল কা‘বার গিলাফের সাথে লেপ্টে আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন তাকে হত্যা করো।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯)
কা‘বার গিলাফের সাথে লেপ্টে থাকাবস্থায়ও ইবনে খাতালকে কেন রাসূলুল্লাহ (সা.) হত্যা করার নির্দেশ দিলেন? এর জবাবে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করে বলেন--“লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে গালাগাল করতো।” (ফাতহুল বারী, ২য় খণ্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা)

হাদীস--১১ :
عن على رضى الله عنه أن يهودية كانت تشتم النبى -صلى الله عليه وسلم- وتقع فيه فخنقها رجل حتى ماتت فأبطل رسول الله -صلى الله عليه وسلم- دمها
অর্থ : হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.) কে গালাগাল করতো এবং তাঁর ব্যাপারে মন্দ কথা বলতো। তখন এক ব্যক্তি তার গলা চেপে ধরলো, ফলে সে মারা গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার প্রাণবধকে দায়মুক্ত সাব্যস্ত করে তার রক্তবদলাকে বাতিল করে দিয়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৬৪, সুনানে বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ১৩১৫৪)

হাদীস--১২ :
عن البراء بن عازب قال : بعث رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى أبي رافع اليهودي رجالا من الأنصار فأمر عليهم عبد الله بن عتيك وكان أبو رافع يؤذي رسول الله صلى الله عليه و سلم ويعين عليه الخ قال فأضربه ضربة أثخنته ولم أقتله ثم وضعت ظبة السيف في بطنه حتى أخذ في ظهره فعرفت أني قتلته
অর্থ : হযরত বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইয়াহুদী আবু রাফে‘র প্রতি কয়েকজন আনসার সাহাবীকে পাঠালেন। আর তাদের আমীর নিযুক্ত করলেন আবদুল্লাহ ইবনে আতীক (রা.)কে। আবু রাফে‘ রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কষ্ট দিত এবং অন্যদেরকে তাঁকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতো। আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) বলেন, আমি তাকে প্রচন্ড আঘাত করি এত পর্যন্ত যে, তাকে রক্তে রঞ্জিত করি। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এ পর্যন্ত যে, তা তার পিঠ ফুরে বেরিয়ে গেলো। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮১৩)


মুরতাদদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর কার্যধারা --------


কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগাল করলে বা মন্দ বললে সে মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তার বিশদ বর্ণনা পবিত্র কুরআনের আয়াত ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা গেলো। তেমনি হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর জীবনে আমরা এ বিধানের যথাযথ প্রয়োগ দেখতে পাই। নিম্নে এ সম্পর্কিত কিছু আছার পেশ করা হলো--

আছার--১ :
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর ইয়ামান ও নজদে মুরতাদ হওয়ার ফিতনা প্রবল আকার ধারণ করে। তখন অনেক লোক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসাইলামা কাজ্জাব ও সাজ্জাহের নবুওয়াত মেনে মুরতাদ হয়ে যায়। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইরতিদাদের এ ফিতনারোধে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ালেন। এ লক্ষ্যে হযরত ইকরামা বিন আবী জাহল (রা.) কে সেখানে পাঠালেন এবং তাঁকে এ নসীহত করলেন যে,
 ومن لقيته من المرتدة بين عمان إلى حضرموت واليمن فنكل به
“আম্মান থেকে হাজরামাওত এবং ইয়ামান পর্যন্ত যত মুরতাদ পাবে, সবক’টিকে হত্যা করবে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ম খ-, ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

আছার--২ :
عن سعيد بن عبد العزيز : أن أبا بكر قتل أم قرفة الفزارية في ردتها
হযরত সাঈদ বিন আবদুল আজীজ (র.) থেকে বর্ণিত, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) উম্মে কিরফা ফাযারিয়াকে মুরতাদ হওয়ার অপরাধে হত্যা করেন।” (সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং ১১০, সুনানে বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ১৬৬৪৯)

আছার--৩ :
كتب عمرو بن العاص إلى عمر يسأله عن رجل أسلم ثم كفر ثم أسلم ثم كفر حتى فعل ذلك مرارا أيقبل منه الإسلام فكتب إليه عمر أن اقبل منه الإسلام ما قبل الله منهم اعرض عليه الإسلام فإن قبل فاتركه وإلا فاضرب عنقه"
হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) হযরত উমর (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তির হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে পত্র লিখলেন যে, সেই লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে, এরপর মুরতাদ হয়ে কাফির হয়ে গিয়েছে, অতঃপর পুনঃ ইসলাম গ্রহণ করেছে, এরপর আবার মুরতাদ হয়ে কাফের হয়ে হয়েছেÑএটা সে বারবার করেছে। এমতাবস্থায় কি তার ইসলাম গ্রহণ কবূল করা হবে? তখন হযরত উমর (রা.) উত্তরে লিখলেন যে, যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা তার ইসলাম গ্রহণ কবূল করেন, আপনি তার ইসলাম গ্রহণকে কবূল করুন। তাই তার সামনে ইসলাম পেশ করুন। যদি সে গ্রহণ করে, তাহলে তাকে ছেড়ে দিন। অন্যথায় তাকে হত্যা করুন। (কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফ‘আল, হাদীস নং ১৪৬৭)

আছার--৪ :
أن عثمان بن عفان كان يقول: "من كفر بعد إيمانه طائعا فإنه يقتل"
হযরত উসমান (রা.) বলেনÑ“যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর ইচ্ছাকৃত কুফরী করে, তাকে হত্যা করা হবে।” (কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৭০)

আছার--৫ :
عن علي قال "يستتاب المرتد ثلاثا فإن عاد قتل"
হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মুরতাদকে তাওবা করতে তিনবার বলা হবে। এরপরও যদি মুরতাদপনার পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে।” (কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ১৪৭৫)

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনার বাস্তবায়নে মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রা.) একনিষ্ঠভাবে আত্মনিবেদন করেন। নিম্নে এ সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা উদ্ধৃত করা হলো--

ঘটনা--১ :
ইবনে খাতালের দুই বাঁদী ছিল, তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে কুৎসামূলক গীত গাইতো। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, তা সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বাস্তবায়ন করেন। (আসাহহুর সিয়ার, ২৬৬ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৯৮ পৃষ্ঠা)
সেই গীত যদিও অন্যের বানানো, তবু তা গাওয়ার কারণে তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়। সুতরাং যারা নিজেরাই তা বানিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে নোংরা কথা বলে,তাদের ব্যাপারে যে কঠোর মৃত্যুদণ্ডের বিধান হবে--তা সহজেই অনুমেয়।

ঘটনা--২ :
হুয়াইরিস ইবনে নাকীজ নামক এক কুলাঙ্গার রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কষ্ট দিত। মক্কা বিজয়ের দিন তাকেও হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই ধর্মাপরাধী হুয়াইরিসকে হযরত আলী (রা.) হত্যা করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা/ আসাহ্হুস সিয়ার, ২৬৪ পৃষ্ঠা)

ঘটনা--৩ :
মদীনায় আবু ইফক নামীয় এক ধর্মদ্রোহী ছিল। সে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে সালেম আমের নামক এক সাহাবী তাকে হত্যা করেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খ-, ২৮৫ পৃষ্ঠা)

ঘটনা--৪ :
বনী উমাইয়্যার এক মহিলা কবি ছিল। তার নাম ছিলো আসমা বিনতে মারওয়ান। সে আবু ইফকের হত্যা দেখে ইসলামকে ঠাট্টা করে কবিতা রচনা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সেই সময় উমায়ের বিন আদল আল খাতামী (রা.) তার ঘরে গিয়ে তাকে হত্যা করে আসেন। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জানালে তিনি খুশী হয়ে বলেন--হে উমায়ের! তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (দ্বীনের) নুসরত করেছো।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড, ২৮৬ পৃষ্ঠা)

ঘটনা--৫ :
গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী নামে একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যার সাথে এ চুক্তি ছিল যে, তার জান-মালের হিফাজতের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের। বিনিময়ে সে ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগারে কর জমা দিতো। ইসলামের পরিভাষায় যাকে জিম্মি বলা হয়। হযরত গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী (রা.) জিম্মি লোকটিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। লোকটি জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালী দিল। তখন হযরত গুরফা রেগে লোকটিকে সেখানেই হত্যা করে ফেলেন।
এ সংবাদ হযরত আমর ইবনুল আস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি গুরফাকে বললেন, এ লোকের সাথেতো আমাদের নিরাপত্তাদানের অঙ্গীকার আছে। সে হিসেবে সে তো নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? গুরফা জবাব দিলেনÑ“তার সাথে আমাদের অঙ্গীকার একথার উপর নয় যে, সে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগাল দিবে আর আমরা তার হিফাজত করবো।” (হায়াতুস সাহাবা, ২য় খণ্ড, ৩৫১ পৃষ্ঠা)

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া সম্পর্কে ইজমায়ে উম্মত

কুরআন, হাদীস, সীরাত ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের ইজমা তথা সর্বসম্মত মতানুসারে এ কথা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগালকারী ও কূৎসা বর্ণনাকারী যিনদীক এবং ইসলাম পরিত্যাগকারী মুরতাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। ইতোপূর্বে এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে এ ব্যাপারে ইজমায়ে উম্মত সম্পর্কে বর্ণনা উল্লেখ করা হলো--

আল্লামা কাজী ইয়াজ (রহ.)-এর ভাষ্যে ইজমার বর্ণনা :
قال القاضي أبو الفضل رضي الله عنه: قد تقدم من الكتاب والسنة وإجماع الأمة ما يجب من الحقوق للنبي صلى الله عليه وسلم، وما يتعين له من بر وتوقير، وتعظيم وإكرام، وبحسب هذا حرم الله تعالى أذاه في كتابه، وأجمعت الأمة على قتل متنقصه من المسلمين وسابه، قال الله تعالى: (إن الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله في الدنيا والآخرة وأعد لهم عذابا مهينا
আল্লামা কাজী ইয়াজ (রহ.) বলেন, কুরআন, হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শানে কী কী হক রয়েছে, তা প্রমাণিত এবং তাঁকে কীভাবে সম্মান-ইজ্জত দিতে হবে, তা-ও সুনির্দিষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কষ্ট দেয়াকে হারাম করেছেন। আর উম্মত একথার উপর ইজমা-ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে, মুসলমানদের মাঝে যে তাঁর কুৎসা বর্ণনা করবে, কিংবা তাঁকে গালি দিবে, তাকে হত্যা করা হবে। (সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২ খণ্ড, ২১ পৃষ্ঠা, আশ শিফা, ২য় খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)

চার ইমামের দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর অবমাননার শাস্তি

কুরআনে কারীম, হাদীসে রাসূল (সা.) ও আছারে সাহাবা (রা.)-এর আলোকে সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম (রহ.) এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শানে যে ব্যক্তি বেয়াদবী করবে, কটু কথা বলবে, নিন্দা করবে বা দোষচর্চা করবে, সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে। তাকে হত্যা করা আবশ্যক হবে। এ সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা পেশ করা হলো--

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (রহ.) ‘তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকাম’ কিতাবে আল্লামা তাক্বীউদ্দীন সুবকী (রহ.)-এর ‘আসসাইফুল মাসলূল ‘আলা মান সাব্বার রাসূল (সা.)’ কিতাব থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে,
قال الامام خاتمة المجتهدين تقى الدين ابو الحسن على بن عبد الكافى السبكى رحمه الله تعالى فى كتابه السيف المسلول على من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، قال القاضى عياض اجمعت الامة على قتل منتقصه من المسلمين وسابه،
قال ابو بكر ابن المنذر اجمع عوام اهل العلم على من سب النبى صلى الله عليه وسلم القتل وممن قال ذالك مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى، قال عياض وبمثله قال ابو حنيفة وأصحابه والثورى واهل الكوفة والاوزعى فى المسلم، وقال محمد بن سحنون اجمع العلماء على ان شاتم النبى صلى الله عليه وسلم والمنتقص له كافر والوعيد جار عليه بعذاب الله تعالى، ومن شك فى كفره وعذابه كفر، وقال ابو سليمان الخطابى لا اعلم احدا من المسلمين اختلف فى وجوب قتله اذا كان مسلما، (رسائل ابن عابدين- ১/৩১৬)

ইমামে খাতিমাতুল মুজতাহিদীন তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আবদুল কাফী আস সুবকী (রহ.) স্বীয় ‘আস-সাইফুল মাসলূল ‘আলা মান সাব্বার রাসূল (সা.)’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, কাজী ইয়াজ (রহ.) বলেন, “উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, মুসলমানদের মাঝে যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শানে বেয়াদবীপূর্ণ উক্তি করবে বা গালাগাল করবে, তাকে হত্যা করা হবে।” হযরত আবু বকর ইবনুল মুনজির (রহ.) বলেন, “সমস্ত আহলে ইল্ম একথার উপর একমত যে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগাল করবে বা মন্দ বলবে, তাকে হত্যা করা হবে।
যে সকল আহলে ইল্ম ফুক্বাহা এ কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.), ইমাম আবুল লাইস (রহ.), ইমাম আহমাদ (রহ.) ও ইমাম ইসহাক (রহ.)।- আর এটাই ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মাজহাব।
আল্লামা কাজী ইয়াজ (রহ.) বলেন, এমনিভাবে একই মত প্রকাশ করেছেন ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও তাঁর সাথীগণ এবং ইমাম সুফিয়ান সাওরী, আহলে কুফা ও ইমাম আওযা‘য়ী মুসলিম থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে।

ইমাম মুহাম্মদ বিন সুহনুন (রহ.) বলেন, এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ইজমা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)কে গালাগালকারী ও তার কুৎসা বর্ণনাকারী কাফের। তার উপর আল্লাহর শাস্তির ধমকি বলবৎ হবে। যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাফের হওয়া এবং তার শাস্তির উপযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে, সেও কাফের হয়ে যাবে।

ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী (রহ.) বলেছেন, মুসলমান থেকে মুরতাদ হওয়া ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড অবধারিত হওয়ার ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে আমার জানা নেই।আমি এমন কোন মুসলমানের ব্যাপারে জানি না যে, এমন ব্যক্তির হত্যার আবশ্যকতার ব্যাপারে মতবিরোধ করে। (রাসায়িলে ইবনে আবেদীন, ১ম খণ্ড, ৩১৬ পৃষ্ঠা)

মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কুৎসা বর্ণনাকারী ও অবমাননাকারীর ব্যাপারে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কিরাম একমত যে, এমন কুলাঙ্গার যদি স্বীয় কুফরী থেকে তওবা করে ঈমানের পথে ফিরে না আসে, তাহলে তাকে ধর্মদ্রোহী মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে। রাষ্ট্র তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।

কিন্তু ফুক্বাহায়ে কিরামের মাঝে এ ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে যে, যদি সেই ব্যক্তি তাওবা করে,তাহলে তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হবে কি না?
ইমাম মালেক (রহ.) এবং ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর ফাতওয়া হল--রাসূলুল্লাহ (সা.)কে মন্দ বলা এমন মহা-অপরাধ যে, তাওবা করার পরও তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হবে না। অনেক হানাফী ফক্বীহ ও শাফেয়ী ফক্বীহ একথার উপরই ফাতওয়া দিয়েছেন।
কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর প্রাধান্য পাওয়া ফাতওয়া হল--তওবা করা ও দ্বিতীয়বার ঈমান আনার পর তার থেকে হত্যার শাস্তির বিধান রহিত হয়ে যাবে। তবে এসব লোকদের উপর অন্য উপযুক্ত শাস্তি প্রয়োগ করা আবশ্যক।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (রহ.) লিখেছেন যে, ইমাম সুবকী (রহ.) বলেন, যদিও একথাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারী ব্যক্তি তাওবা করলে এবং দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণ করলে আর ইসলামী বিধান মানার দৃঢ়তা প্রকাশ করলে, তার তাওবাকে গ্রহণ করা হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আমার সন্দেহ হয় যে, সে ঈমানের মরতে পারবে কি না? কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে বেয়াদবী করা অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুঁশিয়ারী খুবই কঠোর। এজন্য এ ব্যাক্তির ঈমানের সাথে মৃত্যুর ব্যাপারে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। বরং তাকে হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে বা তার ঈমানকে বরবাদ করা হতে পারে এবং মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব না-ও হতে পারে। (রাসায়িলে ইবনে আবেদীন, ২য় খণ্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা)


রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অবমাননাকারী মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড কে কার্যকর করবে? ----------------------------

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মতানুসারে উক্ত মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর করা হবে। তবে সাথে সাথে তারা হাদীসের বর্ণনানুযায়ী একথাও বলেছেন যে, যদি কোন সাধারণ মানুষ তাকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে তার উপর কোন শাস্তি আসবে না। কেননা, মুরতাদ হওয়ার দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারী ব্যক্তিটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে। এ সম্পর্কে বাদায়ি‘উস সানায়ি‘ কিতাবে বলা হয়েছে--
إن قتله إنسان قبل الاستتابة يكره له ذلك ولا شيء عليه لزوال عصمته بالردة (بدائع الصنائع، كتاب السير، فصل وأما بيان أحكام المرتدين)
“যদি তাকে কেউ হত্যা করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তওবা তলব করার আগেই, তাহলে কাজটি তার জন্য মাকরূহ হবে। তবে তার উপর হত্যায় দায়ে কিছুই বর্তিত হবে না সেই মুরতাদ ব্যক্তির ইরতিদাদ দ্বারা তার জানের প্রতিরক্ষণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে।” (বাদায়ি‘উস সানায়ি‘, ৭ম খণ্ড, ১৩৪ পৃষ্ঠা)

তবে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে ইসলামী আইন বলবৎ নেই এমন মুসলিম দেশের জন্য উলামায়ে কিরাম এ মতই পোষণ করেন যে, মুসলিম জনগণের কর্তব্য হচ্ছে--রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমানকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে চাপ দিবে। প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। কিন্তু আইন নিজেদের হাতে তুলে নিবে না বা নিজেরাই নবীজীর অবমাননাকারীকে হত্যা করবে না। কেননা, এতে দেশে বিশৃংখলা ও ফাসাদ সৃষ্টি হবে--যার থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। তবে সরকার এ দাবী পূরণ না করা পর্যন্ত ন্যায়ানুগ বিভিন্ন পন্থায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

শেষকথা


উল্লিখিত রেফারেন্সভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, রাসুল (সা.) কে যারা গালাগাল করে, কুৎসা রটায় তারা মুরতাদ। তাদের একমাত্র শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। কার্যকর করবে রাষ্ট্রপক্ষ।

মক্কারর কাফেররা পর্যন্ত যে নবীজীকে আল আমীন তথা বিশ্বাসভাজন বলে মন্তব্য করতো, খৃষ্টান বাদশা নাজ্জাশীর সামনে মক্কার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সম্মানহানীকর বক্তব্য দেয়ার উদ্দেশ্যে গিয়েও যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কার সবচে’ সম্ভ্রান্ত, সবচে’ নীতিবান, সবচে’ চরিত্রবান বলে মন্তব্য করেছে। সেখানে আজ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে, হাজারো পীর বুজুর্গ, লাখো আলেম ওলামার দেশে কতিপয় কুলাঙ্গাররা কি করে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে জঘন্য সব মন্তব্য করে পাড় পেয়ে যায়? রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে জঘন্য মন্তব্য শুনার পর চুপ করে থেকেও যারা হাশরের ময়দানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করার লালসা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শাফায়াতে হাশরের ভয়াবহ হালাত থেকে মুক্তি পেতে আশা রাখেন তাদের দেখলে হাসি পায়। এমন নিমকহারাম জাতি পৃথিবীতে আর আছে কি না মনে সন্দেহ জাগে।
আমার বাপকে গালি দিলে আমি গর্জে উঠি। মায়ের চরিত্রে কেউ কালিমা লেপন করলে আমি তার টুটি চেপে ধরি। কিন্তু যার নাম আামার কালিমার অংশ, আমার মুসলমানিত্বের অংশ, আমার ঈমান, যার নাম না বলে কবরে মুক্তি পাব না, যার সুপারিশ ছাড়া হাশরের ভয়াবহ হালাত থেকে মুক্তি পাব না, যার হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান না করলে কলজে ফাটা কান্নায় কাতরাবো, সেই মহান নবীকে আজ কতিপয় কুলাঙ্গার গালাগাল করছে, নোংরা ভাষায় উপস্থাপন করছে বিভিন্ন লেখায়। তারপরও আমি নিশ্চুপ। আমি খুব দ্বীনদার মুসলমান?! ধিক! এই মুসলমানিত্বের! ধিক! এই স্বার্থপরতার।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যিকার অর্থে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ভালবাসার তৌফিক দান করুন। গুস্তাখে রাসূলুল্লাহ কুলাঙ্গারদের আল্লাহ রাব্বুল হেদায়াত দিন, নতুবা কাব বিন আশরাফ, ইবনুল খাতাল, আবু রাফেদের মত নিকৃষ্ট মৃত্যু দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
Source LINK

No comments:

Post a Comment