Wednesday, January 14, 2015

ভুল সংশোধন || পর্ব -- ২

ভুল সংশোধন পর্ব -- ২লেখকঃ মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহঃ 

Source LINK 
-------------------------------
মধুর নামে বিষ
--------------------------------
জৈনক ভদ্রলোক পরোপকার এবং লোক সেবার নামে সকলের বাড়িতে সকলে যাহাতে অতি সহজে ফল খাইতে পারে সেই জন্য সকলকে বলিলেন যে , আমি তোমাদের বাড়িতে সুমিষ্ট লেংড়া আমের বীজ লাগাইয়া গেলাম । আসলে ঐ ফলটি ছিলো তিক্ত বিষাক্ত বিষবৃক্ষের বিষ ফল , লেংরা আম নয় । কিন্তু আমার মত স্হলদর্শী অজ্ঞ যারা , তারা মনে করল , খুব ভাল হইল যে , আমরা সহজে সুমিষ্ট লেংড়া আমের ফল খাইতে পারিব । ঐ ভদ্রলোক ( মওদুদী )দৃপ্ত কন্টে ঘোষণা দিলেন ----
১ । আল্লাহর রাসুল ব্যতীত সত্যের আর কাউকে মানা যাইবে না ।
২ । রাসূলে ব্যতীত অন্য কাউকেও সমালোচনার উর্ধ্বে মনে করা যাইবে না ।
৩ । রাসুলে খোদা ব্যতীত অন্য কাহারও জেহেনী গোলামী অর্থাৎ নির্বিচারে অনুকরণ - অনুসরণ করা যাইবে না ।
কথা কয়টি সুন্দর । আমরা মনে করিলাম , শিরক বিদআতের সব অন্ধকার দুর হইয়া গেল । তাওহহীদের আলোকে জগত আলোকিত হইয়া উঠিল । কিন্তু সুক্ষ্ণদর্শী অন্ত দৃষ্টি সম্পন্ন আলেমগণ বুঝলেন , মনে হয় এতে যেন কি তিক্ত বিষাক্ত বিষ মাখানো আছে । বছর ত্রিশেক পরে যখন ঐ গাছ শাখা প্রশাখা , ফুল পাতা ছাড়িল , তখন আমরা যারা স্হলদর্শী ছিলাম , তাহারাও বুঝিলাম ইহাতো লেংড়া আম নয় ; ইহাতো বিষাক্ত বিষ বৃক্ষের বিষ ফল । বিষ বৃক্ষও সাধারণ বিষ বৃক্ষ নয় , যাতে মানুষের দৈহিক জীবন নাশ কর , বরং ইহা এমন বিষ বৃক্ষ , যাতে মানুষের রূহানী যিন্দেগী ধ্বংস করে এবং মূল ঈমানকে বিনষ্ট করে ।
সেই বিষ বৃক্ষ কি ? সেই বিষ বৃক্ষ হলো , অতি গোপনে অতি সন্তর্পণে সাহাবা এ কেরামের উপর থেকে বিশ্বাস উঠাইয়া দেওয়া । আর সাহাবাদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাওয়ার অর্থই কোরআন হাদীস থেকে বিশ্বাস উঠে যাওয়া এবং কোরআন হাদীস থেকে বিশ্বাস উঠে যাওয়ার অর্থ হলো ঈমান হারা হয়ে চির জাহান্নামী হওয়া । এই জন্যই এই বিষ বৃক্ষ কে ঈমান ধ্বংসকারী বলা হইয়াছে । এই জন্যই সমস্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীন , আয়েম্মায়ে মুহাদ্দিসীনো ও সমস্ত আয়েম্মায়ে বুজুর্গানে দ্বীনের তরফ হইতে এই বিশেষ আকিদা - ঈমানের বিশেষ অঙ্গ রূপে লেখা হইয়াছে ।
হযরত রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বিন্দুমাত্র সুহবত যারা লাভ করিয়াছেন , তাহাদের মধ্যে কাহারও গুণ চর্চা ছাড়া দোষ চর্চা আমরা করিব না , ইহা আমাদের ঈমান ও ধর্মের একটি প্রধান অঙ্গ ।
সমস্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার কিতাব সর্ব মান্য শরহে আকীদাতুত তাহাবীর ৩৯৬ পৃষ্ঠায় ইজমায়ী আকীদা হিসাবে উল্লেখ রহিয়াছে ---
আমাদের উপর ওয়াজিব আমরা কোনো একজন সাহাবারও গুণ চর্চা ব্যতীত যেন দোষ চর্চা না করি । কারণ সাহাবা রাঃ এর প্রতি প্রগাড় ভক্তি এবং মহব্বত রাখা আমাদের ধর্ম ও ঈমানের প্রধান অঙ্গ । এবং আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান অবলম্বন । আকায়েদের বিখ্যাত কিতাব আল-মুছামায়ার ৩১৩ পৃষ্ঠায় সাহাবা রাঃ এর দর্জা নির্ণয় করিয়া বলা হইয়াছে ----
কোনো মুসলমান সুন্নাত জামাতভুক্ত থাকিতে চাইলে তাহার উপর ওয়াজিব হইবে সমস্ত সাহাবাগণের প্রত্যেক সাহাবীকে সত্যবাদী , ন্যায় পরায়ণ , মুত্তাকী পরহেজগার , ইসলামের ও উম্মতের স্বার্থ কে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে স্হান দানকারী মনে করিতে হইবে । এবং কোনো একজন সাহাবীর প্রতি কটাক্ষ করা জায়েজ হইবে না । যদি কেহ ইহার খেলাফ করে বে সে আর আহলে সুন্নাতের জামাতভুক্ত থাকিতে পারিবে না , খারেজ হইয়া যাইবে । যেহেতু এই মাসআলাটি কোনো সাধারণ মাসআলা নয় , অতি গুরুত্বপূর্ণ ঈমান ও আকিদার মাসআলা , আখেরাতের নাজাতের মাসআলা তাই এই মাসআলার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেছি এবং পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি যে খবরদার ! কেউ ইহাকে হালকা মনে করিবেন না ।
পূর্বেই বলিয়াছি যে ধর্মের ভিত্তি তিন খানা মজবুত অভঙ্গুর প্রস্তরের উপরে । তার মধ্যে তৃতীয় প্রস্তর সাহাবা এ কেরামের আমলী জিন্দেগীই সর্বাধীক গুরুত্বপূর্ণ । এই জন্য বলিয়াছি কোরআনের ভাষার ও হাদীসের ভাষার দুই অর্থ করা যাইতে পারে কিন্তু সাহাবাদের আমলী জিন্দেগীর দুই অর্থ করা যাইতে পারে না । তাহাদের আমলী জিন্দেগীই আল্লাহর মনোনীত অর্থের জিবন্ত রূপ বাস্তব নমুনা । এই জন্যই ইহাকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হইয়াছে । কোনো কু চক্রান্তকারী হয়তো কোরআন হাদীসের ভাষার মধ্যে দ্বিতীয় অর্থ ডোকাইয়া দিতে পারে । কিন্তু সাহাবাদের আমলী জিন্দেগীর মধ্যে দ্বিতীয় অর্থ ডোকাইবার সুযোগ নাই । এই জন্যই দেখা যায় একদল কুচক্রান্তকারী নামাজ রোজার অর্থের মধ্যে গোলযোগ করিতেছে কিন্তু সাহাবাদের জীবন ধারার দ্বারা যে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে তার মধ্যে কেউ দাঁত বসাইতে পারে নাই । এই জন্যই ইসলামের শত্রুরা তৃতীয় প্রস্তর সাহাবাদের আমলি জিন্দেগীর মধ্যে যদিও কোদাল বসাইতে পারেনি কিন্তু কোদাল মারিয়াছে সবচেয়ে বেশী ।
চলবে -----

No comments:

Post a Comment