Wednesday, January 14, 2015

ভুল সংশোধন || পর্ব-- ১

ভুল সংশোধন লেখকঃ মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহঃপর্ব-- ১ 

Source LINK 
------------------------------
ঈমানের প্রকারভেদ
--------------------------------
ঈমান দুই প্রকারঃ ঈমানে তাহকিকী ও ঈমানে তাকলিদী । দুই প্রকার ঈমানই আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য । ঈমানে তাকলিদী নিরাপদ কিন্তু নিম্নস্তরের , ঈমানে তাহকিকী উচ্চস্তরের কিন্তু বিপদজনক ।
আমাদের প্রিয় নবী করীম সাঃ বলিয়াছেনঃ অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হইয়া পড়িবে ; তার মধ্যে একটি জামাত হইবে নাজী অর্থাৎ বিনা শাস্তিতে বেহেশতে যাইবে । আর ৭২ হইবে দোযখী ।
--------------------------------
অনুসরণ ও অন্বেষণ
-------------------------------
অনুকরণ দুই প্রকারঃ সত্য অনুকরণ ও অন্ধ অনুকরণ । সত্য অনুকরণ বলে যিনি সত্যকে বুঝিয়াছেন তাহাকে এবং তাহার প্রদর্শিত পথ ও মতকে যাচাই বাছাই করিয়া উহার অনুসরণ করিয়া সত্য পথে চলেছেন । এর দ্বারা মুক্তি ও নাজাত হাসিল হইবে এবং ইহাই প্রথম স্তরের উত্তম অনুকরণ । আর অন্ধ অনুকরণ বলে না বুঝিয়া অনুকরণ করাকে । অন্ধ অনুকরণ আবার দুই প্রকার - সত্যকে না বুঝিয়া অনুকরণ করাকেও অন্ধ অনুকরণ বলে , এইরকম অনুকরণ জায়েজ এবং এর দ্বারা নাজাতও হাসিল হইবে । দ্বিতীয় প্রকার অন্ধ অনুকরণ হইল , না বুঝিয়া বাতেল বা মিথ্যার অনুকরণ , এটাই আসল অন্ধ অনুকরণ । ইহা জায়েজ নহে , ইহা হারাম । ইহার দ্বারা নাজাত হাসিল হইবে না ; বরং ইহার দ্বারা অবশ্যই জাহান্নামে যাইতে হইবে ।
অম্বেষণ দুই প্রকারঃ এক । অম্বেষণে যদি সত্য পথ ধরিয়া চলে তবে অম্বেষণকারী সত্যে পৌঁছে যায় , মনজিলে মকসুদ পেয়ে যায় । দুই । অম্বেষণকারী পথে মারা যায় । সত্য অম্বেষণকারী পথে মারা যাইবার কোনই আশঙ্কা থাকে না ।
----------------------------------
ধর্মই প্রকৃত সত্যের মাপকাঠি

তিনটি বিষয় মানুষের সামনে আছে -- ১ । ধর্ম ২ । বিজ্ঞান ৩ । ইতিহাস । শেষের দুইটি মানব মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞান , কাজেই ভূল-প্রমাদ সম্বলিত । প্রকৃত সত্য ধর্ম আল্লাহর জ্ঞান । আল্লাহর জ্ঞান নির্ভুল । কাজেই চোখ বুঝে আল্লাহর জ্ঞানের অনুসরণ -অনুকরণ করিয়া গেলে মানুষের পথভ্রান্ত হওয়ার বা পথে মারা যাওয়ার কোনোই আশঙ্কা থাকে না । মানুষ এমনই সর্বনাশা জীব যে , সে তার কল্পনার দ্বারা এমন পবিত্র জিনিসেও অসংখ্য অগণিত আঘাত আনতে ক্রুটি করে নাই ।
মানুষের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য আল্লাহর মিলন লাভ । আল্লাহর মিলন অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ; নেকি , পুণ্য , সওয়াব আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেরই নাম এবং পাপ , বদী , গোনাহ আল্লাহর অসন্তুষ্টিরই নাম । আল্লাহর সন্তুষ্টি ( সওয়াব ) বড়ও ছোটও হয় । কিছু যে ছোট পুণ্যকে , আল্লাহর ছোট সন্তুষ্টিকে উপেক্ষা করে , সে অতি শিঘ্র বড় পুণ্য , আল্লাহর বড় সন্তুষ্টি হইতে বঞ্চিত হইয়া পড়ে । পাপও ছোটে- বড় হইয়া থাকে ।
পাপ অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো । ঘরের চাল যদি অন্যান্য বড় অগ্নি খন্ড গুলি নিভাইয়া ক্ষমতা একটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ রাখিয়া দেওয়া হয় , তাহা যেমন অল্পক্ষণে বিরাট অগ্নি শিখায় পরিণত হইয়া ঘরকে জ্বালাইয়া ভস্ম করিয়া দেয় , তদ্রূপ বড় বড় পাপ বাদ দিয়ে কেহ যদি ছোট পাপ করিতে থাকে , তবে এই ছোট পাপও ঐ অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মত তাহাকে বিপথে ধ্বংসের পথে টানিয়া নিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করিয়া ধ্বংস করিয়া দেয় ।
--------------------------------
গোড়ার কথা

আজ প্রায় ৪ হাজার বৎসর পূর্বের কথা । হযরত ইব্রাহীম আঃ আল্লাহর নির্দেশে কাবা শরীফের ঘর তৈয়ার করিয়া দিলেন । কাবা শরীফের ঘর হইয়াছে আদি হইতে বিশ্ব স্রষ্টা মহাপ্রভু আল্লাহর তরফ হইতে বিশ্ব-মানবের জন্য বিশ্ব-প্রভুর মিলন সাধনার জন্য স্বয়ং প্রভু নির্ধারিত মূল কেন্দ্রীয় ঘর । এই কেন্দ্রীয় ঘর যখন ছিল না তখন স্হানটি ছিল ঘাস-পানি , লোকজন বিহীন ধু ধু বালুকাময় মরুভূমি । তখন হযরত ইব্রাহীম আঃ দুগ্ধপোষ্ব শিশু তনয় ইসমাইলকে এবং তার মাতাকে এই বলিয়া রাখিয়া আসিলেন ---
হে প্রভু ঘাস-পানি বিহীন মরভূমিতে আমার কলিজার টুকরা চোখের পুতলীকে তোমার মঞ্জুরী ও সম্মান দানকৃত ঘরের কাছে রাখিয়া গেলাম ।
এইভাবে এক মোশক পানি ও এক থলি খেজুর দিয়া তিনি সুদূর শাম দেশে প্রায় তিনশত মাইল দুরে চলিয়া গেলেন ।
আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আঃ কে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করেন । প্রথম নমরূদের আগুনের কঠোর পরীক্ষা , দ্বিতীয়ত দুধের শিশু কলিজার টুকরা ছেলে এবং স্ত্রীকে মরভূমিতে নির্বাসনের পরীক্ষা , তৃতীয়ত প্রাণাধিক পুত্রকে নিজের হাতে কোরবানীর পরীক্ষা , চতুর্থত আল্লাহর পুণঃ নির্মাণের গুরুদায়িত্বের পরীক্ষা । এইভাবে বিভিন্ন কঠোর পরীক্ষায় ফেলিয়া সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করাইয়া ইব্রাহীম আঃ কে আপন মাহবুব বানাইয়া নেন । ইহার পর হযরত ইব্রাহীম আঃ খোদার ঘর কাবা শরীফকে সমস্ত পৃথিবীর জন্য মূল সত্য খোদায়ী ধর্মের মূল কেন্দ্র করিয়া বড় ছেলে হযরত ইসমাইল আঃ এর উপর ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করেন । অবশ্য সমস্ত আফ্রিকা এবং ইউরোপ ইসলাম প্রচারের জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসকে মূল কেন্দ্রেরই শাখা কেন্দ্র রূপে স্হাপন করিয়া দ্বিতীয় ছেলে হযরত ইসহাক আঃ উপর সেই শাখা কেন্দ্রের দায়িত্ব অর্পণ করেন । এইভাবে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম এবং তাহার সুযোগ্ব পুত্রদ্বয়ের দ্বারা প্রাচ্চে এবং প্রাশ্চাত্বে ইসলাম প্রচারের ব্যবস্হা করিয়া ইসলামের বুনিয়াদকে মজবুত করিয়া গড়িয়া তোলেন । পবিত্র মক্কার এই মহাকেন্দ্রের পরিচালক আল্লাহর প্রতিনিধি হযরত ইব্রাহীম আঃ এর বংশেই সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী সরওয়ারে কায়েনাত মাহবুবে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সাঃ জন্মগ্রহণ করেন । এই সমস্ত কথা এবং আমাদের প্রিয় নবী সাঃ ধর্মের জন্য কোথায় কিভাবে হিজরত করিবেন এবং কিভাবে তথা হইতে দশ হাজার পবিত্রাত্মা মহাত্মা আসহাব সমভিবাহারে মক্কা জয় করিবেন । এই সমস্ত কথা অতি স্পষ্ট ভাবে পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবে ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে , এমনকি আমাদের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আসহাবগণ সর্বগুণে গুণাম্বিত কত সুমহান চরিত্রের অধিকারী পবিত্রাত্মা মহাত্মা হইবেন তাহাও বিস্তারিত ভাবে সূত্র পরাম্পরা ধারাবাহিকতার হিত পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহে উল্লেখ রহিয়াছে , যাহাতে শত্রুদের ইসলামের উপর বিন্দু পরিমাণও দাঁত বসাইবার সুযোগ না থাকে ।
অতঃপর আমাদের নবী করীম সাঃ এবং তাহার পবিত্রাত্মা সাথীদের দ্বারা চিরকালের জন্য আল্লাহ তাআলা ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তব রূপ দান করেন এবং কালামে পাকে জলদ গম্ভীর স্বরে ঘোষণা দিয়ে বলেনঃ আজকের দিনে ( দশম হিজরীর নয়ই জিলহজ্জ আরাফার ময়দানে বিদায় হজ্জে ) আমি পূর্ণ করিয়া দিলাম তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে এবং তোমাদের জন্য আমার অনুগ্রহের দানকে শেষ সীমা পর্যন্ত সমাপ্ত করিয়া দিলাম এবং ইসলাম কে তোমাদের ধর্ম রূপে , জীবন বিধান রূপে এবং তোমাদের চরম মুক্তি , আরম শান্তি , চরম সাফল্য এবং চরম উন্নতির পন্হা রূপে মনোনিত ও নির্ধারিত করিলাম ।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইসলামের দুশমনদের সমস্ত চক্রান্তের সমস্ত আশাকে নিরাশ করিয়া ঘোষণা দিলেনঃ আমিই এই স্মারকলিপিকে অবতীর্ণ করিয়াছি এবং আমিই ইহার সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছি ( মাওলানা ফরিদপুরী রহঃ ঠিকায় লিখিয়াছেন স্মারকলিপি বলতে এখানে কোরআন ও হাদীসকে বুঝানো হয়েছে । কোরআনের মতো হাদীসও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহরই বানী , যদিও তা রাসূল সাঃ জবান মোবারক থেকে বের হয়েছে । তার প্রমাণ কোরআনেই আছে যেমন আল্লাহ বলেনঃ আমার রাসূল নিজের থেকে কিছুই বলেন না । ) কাজেই ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র যতই সুদূর প্রসারী হউক না কেন , আল্লাহর হেফাযতের মোকাবেলায় সকল চক্রান্তই ধুলিস্মাৎ হইয়া যাইতে বাদ্য । ইসলামের সসহিত শত্রুতা করিয়া নিজের কপাল পোড়ানো ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করিবার নাই ।
--------------------------------
ধর্মের ভিত্তি

ইসলাম ধর্মের ভিত্তি কাঁচা ইটের উপর নয় বরং তিন খানা স্বচ্ছ নির্মল পবিত্র জীবনী শক্তি সম্পন্ন অভঙ্গুর প্রস্তরের ইসলাম ধর্মের ভিত্তি । কত শত্রু কতবার এই অভঙ্গুর প্রস্তরের উপর আঘাত আনিয়াছে , কোদাল মারিয়াছে কিন্তু কখনও কোদাল বসাইতে পারে নাই ; বরং কোদাল ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গিয়াছে ।
প্রথম প্রস্তর খানি হলো আল্লাহর বানী আল-কোরআন , দ্বিতীয় প্রস্তর হলো রাসূল সাঃ এর বানী আল-হাদীস , তৃতীয় প্রস্তর হলো রাসুল সাঃ এর আল্লাহর দরবার হইতে আনীত আদর্শের ( সুন্নতের ) ভিত্তিতে নিজ পবিত্র হাতে আপন সাহাবাগণের যে জামাত ঘটন করিয়া গিয়াছেন , সেই জামাতের আমলী জিন্দেগী ( জমায়ে উম্মত ) এবং ইহাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ভিত্তি ।
শত্রুরা আল-কোরআনের শব্দের উপর আক্রমণ করিতে , শব্দের পরিবর্তন করিতে কোনো দিনই সক্ষম হয় নাই । অবশ্য অর্থের ভিতর গণ্ডগোল সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করিয়াছে । কিন্তু অবশেষে তাদেরই ভূল প্রমাণিত হইয়াছে । শত্রুরা দ্বিতীয় প্রস্তর খানা হাদীসের মূল জিনিসের মূল বাহক যারা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া প্রোপাগান্ডা করিতে মোটেই ক্রুটি করে নাই । যেমন করিয়া আম্মিয়া আঃ গণের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করিয়া খোদাদ্রোহী কাফের এবং মুশরিকরা তাহাদিগকে গণক , কবি , এবং উম্মাদ প্রভৃতি অলীক উদ্ভট মিথ্যা গালি দিয়া নিজেদের জাহান্নামের পথ পরিস্কার করিয়া লইয়াছে , তদ্রূপ ভাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইহধামের পরে তাহার পরশ পাথর তুল্য সাহচর্যের অধিকারী সত্য এবং ন্যায় পরায়ণ ধর্মের জ্বলন্ত প্রতীক সাহাবাগণের বিরুদ্ধেও ইহুদী-খ্রিষ্টান এবং কদ্মবেশী মুসলমান নামধারী ধোঁকেবাজ মুনাফেক আব্দুল্লাহ বিন সাবার গোষ্ঠীরাও নানা প্রকার মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করিয়া তাহাদের বদনাম রটাইতে অপচেষ্টা করিয়াছে । এমনকি অনেক ঈমান এবং জ্ঞানের পরিপক্ক অর্বাচীনদের সাময়িক ভাবে বিভ্রান্ত করিতে সক্ষম হইয়াছে । যার ফলে বর্তমান জামানায়ও অনেকে না জানার , না বুঝার কারণে তাহাদের মিথ্যা জালিয়াতের লপ্পরে পড়িয়া যাইতেছে । আমরা সব ভাইকে সতর্ক করিয়া দিতেছি কোনো খাঁটি ঈমানদার , খাঁটি সত্য ধর্মের অম্বেষণকারী যেন তাহাদের খপ্পরে না পড়েন । অর্থাৎ কেহই যেন সাহাবা এ কেরামদের দোষ চর্চা না করেন ।

( চলবে ) (পরবর্তী পর্ব- মধুর র নামে বিষ এবং সর্বশ্রেণীর সাহাবা এ কেরামের উপর মওদুদী সাহেবের জঘন্য হামলা ) । 

1 comment:

  1. علماء دیوبند اور ان کے علمی آثار
    http://alasirchannel.blogspot.com/2012/03/blog-post_30.html

    ReplyDelete