রমযান মাস আসলেই বাংলাদেশের প্রায় ১০০% মসজিদের ইমামগন মিম্বরে দাড়িয়ে রমযান মাসের ফযীলত সম্পৰ্কে একটি হাদিস বর্ননা করেন তা হলো:
“রমযান মাসের প্রথম অংশ রহমত, মধ্যম অংশ মাগফেরাত ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির” -মুনকার হাদিস মুনকার। [১]
মসজিদের ইমামগণ উপরের নিয়মে রমযানের দিনগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিয়ে থাকেন। এই ভাগাভাগির পক্ষে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। এমনকি সাহাবীগন (রা) কিংবা তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈনগন উপরের নিয়মে আমল করেছেন বলে জানা যায় না।
আসলে তারা ঐ সব কথিত আলেমগণ এই মুনকার হাদিস আমলে নিয়ে তারা মুসলমানদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত করছে।
সনদ-সূত্রের দিক দিয়ে হাদীসটি শুদ্ধ নয়। আবার বক্তব্যের দিক দিয়েও হাদীসটি অশুদ্ধ।
সনদের দিক দিয়ে হাদীসটি শুদ্ধ নয়, দু কারণে :
= = = = = = = = == = = = = = = = =
(১) হাদীসটি সবগুলো বর্ণনায় দেখা যায়, হাদীসটি সালমান ফারেসী রা. থেকে সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়াব বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়েবের সাথে সালমান ফারেসীর দেখা-সাক্ষাত যে হয়নি তা সকলের জানা।
(২) হাদীসটির সকল বর্ণনায় দেখা যায় এর মধ্যে একজন বর্ণনাকারী আছেন যার নাম আলী বিন যায়েদ ইবনে জাদআন। তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। যারা তাকে দুর্বল বলেছেন, তারা হলেন: হাফেজ ইবনে হাজার. ইবনে মুয়ীন, ইমাম আহমাদ, ইমাম নাসায়ী, ইবনে খুযাইমা, জুযযানী প্রমূখ। (দেখুন : সিয়ার আলাম আন নুবালা)
অপরদিকে অন্যান্য হাদীস বিশারদগণ হাদীসটিকে মুনকার (প্রত্যাখ্যাযোগ্য) বলে মত দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন, আল্লামা আইনী, আবু হাতেম আর রাযী, শাযখ আলবানী রহ. প্রমুখ। [২]
হাদীসটি বক্তব্যের বিষয়বস্তু থেকেও দুর্বল, কারন:
============================
(ক) এ হাদীসে রহমত-কে প্রথম দশকে, মাগফিরাত-কে দ্বিতীয় দশকে আর মুক্তিলাভ-কে তৃতীয় দশকে আবদ্ধ করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাত ব্যাপক-বিস্তৃত। এটা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তাই আল্লাহ তাআলার ব্যাপকবিস্তৃত বিষয়কে সংকীর্ণ করে ফেলার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, রমজানের প্রতিটি দিন রহমত, মাগফিরা, বরকত ও নাজাত দিয়ে সমৃদ্ধ।
(খ)রাসুল (স:) বলেন,
-‘রমজান মাসের প্রথম রজনীর যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’।[৩]
এ হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, জাহান্নাম থেকে মুক্তি রমজানের প্রতি রাতেই ঘটে।
তাই এ মুক্তিকে শুধু শেষ দশকের সাথে খাছ করা ঠিক হবে না।
রমজানের প্রতিটি দিনই রহমতের মাগফেরাতের নাজাতের! প্রথম থেকে শেষ রোজা পর্যন্ত। অতএব যারা বলে রহমতের ১০ দিন, মাগফেরাতের ১০ দিন আর নাজাতের ১০ দিন তারা মিথ্যা বলে এবং ভুল বলে!
এই ভুল বলা প্রচার করা আর এই সকল লেখায় 'লাইক' দিয়ে সমর্থন জানানো ঠিক কাজ নয়।
তাই এ হাদীসটি প্রচার ও প্রসার না করা কর্তব্য। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে ইচ্ছা করে মিথ্যা কথা বলে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।
যদি আপনি হাদীসটির ব্যাপারে প্রখ্যাত মুহাদ্দিসীনদের কথা না মেনে হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে মনে করেও থাকেন, তবুও সতর্কতার দাবী হল এটা প্রচার না করা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথের দিশা দিন।
তথ্যাসুত্র:
- - - - -
[১] ‘কিতাবুদ দুয়াফা’ লিল উকাইলি: (২/১৬২);
‘আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল’ লি ইব্ন আদি: (১/১৬৫);
‘কিতাবু ইলালিল হাদিস’ লি ইব্ন আবি হাতেম: (১/২৪৯);
‘সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ’ লিল আলবানি: (২/২৬২) ও (৪/৭০)
[২] উমদাতুল কারী ২০/৯) সিলসিলাতুল আহাদীস আল মাওদুআহ ওয়াদ দয়ীফাহ খন্ড ২, নং ২৬২
[৩] তিরমিযী হাদীস সহীহ। LINK
“রমযান মাসের প্রথম অংশ রহমত, মধ্যম অংশ মাগফেরাত ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির” -মুনকার হাদিস মুনকার। [১]
মসজিদের ইমামগণ উপরের নিয়মে রমযানের দিনগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিয়ে থাকেন। এই ভাগাভাগির পক্ষে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। এমনকি সাহাবীগন (রা) কিংবা তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈনগন উপরের নিয়মে আমল করেছেন বলে জানা যায় না।
আসলে তারা ঐ সব কথিত আলেমগণ এই মুনকার হাদিস আমলে নিয়ে তারা মুসলমানদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত করছে।
সনদ-সূত্রের দিক দিয়ে হাদীসটি শুদ্ধ নয়। আবার বক্তব্যের দিক দিয়েও হাদীসটি অশুদ্ধ।
সনদের দিক দিয়ে হাদীসটি শুদ্ধ নয়, দু কারণে :
= = = = = = = = == = = = = = = = =
(১) হাদীসটি সবগুলো বর্ণনায় দেখা যায়, হাদীসটি সালমান ফারেসী রা. থেকে সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়াব বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়েবের সাথে সালমান ফারেসীর দেখা-সাক্ষাত যে হয়নি তা সকলের জানা।
(২) হাদীসটির সকল বর্ণনায় দেখা যায় এর মধ্যে একজন বর্ণনাকারী আছেন যার নাম আলী বিন যায়েদ ইবনে জাদআন। তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। যারা তাকে দুর্বল বলেছেন, তারা হলেন: হাফেজ ইবনে হাজার. ইবনে মুয়ীন, ইমাম আহমাদ, ইমাম নাসায়ী, ইবনে খুযাইমা, জুযযানী প্রমূখ। (দেখুন : সিয়ার আলাম আন নুবালা)
অপরদিকে অন্যান্য হাদীস বিশারদগণ হাদীসটিকে মুনকার (প্রত্যাখ্যাযোগ্য) বলে মত দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন, আল্লামা আইনী, আবু হাতেম আর রাযী, শাযখ আলবানী রহ. প্রমুখ। [২]
হাদীসটি বক্তব্যের বিষয়বস্তু থেকেও দুর্বল, কারন:
============================
(ক) এ হাদীসে রহমত-কে প্রথম দশকে, মাগফিরাত-কে দ্বিতীয় দশকে আর মুক্তিলাভ-কে তৃতীয় দশকে আবদ্ধ করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাত ব্যাপক-বিস্তৃত। এটা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তাই আল্লাহ তাআলার ব্যাপকবিস্তৃত বিষয়কে সংকীর্ণ করে ফেলার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, রমজানের প্রতিটি দিন রহমত, মাগফিরা, বরকত ও নাজাত দিয়ে সমৃদ্ধ।
(খ)রাসুল (স:) বলেন,
-‘রমজান মাসের প্রথম রজনীর যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’।[৩]
এ হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, জাহান্নাম থেকে মুক্তি রমজানের প্রতি রাতেই ঘটে।
তাই এ মুক্তিকে শুধু শেষ দশকের সাথে খাছ করা ঠিক হবে না।
রমজানের প্রতিটি দিনই রহমতের মাগফেরাতের নাজাতের! প্রথম থেকে শেষ রোজা পর্যন্ত। অতএব যারা বলে রহমতের ১০ দিন, মাগফেরাতের ১০ দিন আর নাজাতের ১০ দিন তারা মিথ্যা বলে এবং ভুল বলে!
এই ভুল বলা প্রচার করা আর এই সকল লেখায় 'লাইক' দিয়ে সমর্থন জানানো ঠিক কাজ নয়।
তাই এ হাদীসটি প্রচার ও প্রসার না করা কর্তব্য। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে ইচ্ছা করে মিথ্যা কথা বলে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।
যদি আপনি হাদীসটির ব্যাপারে প্রখ্যাত মুহাদ্দিসীনদের কথা না মেনে হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে মনে করেও থাকেন, তবুও সতর্কতার দাবী হল এটা প্রচার না করা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথের দিশা দিন।
তথ্যাসুত্র:
- - - - -
[১] ‘কিতাবুদ দুয়াফা’ লিল উকাইলি: (২/১৬২);
‘আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল’ লি ইব্ন আদি: (১/১৬৫);
‘কিতাবু ইলালিল হাদিস’ লি ইব্ন আবি হাতেম: (১/২৪৯);
‘সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ’ লিল আলবানি: (২/২৬২) ও (৪/৭০)
[২] উমদাতুল কারী ২০/৯) সিলসিলাতুল আহাদীস আল মাওদুআহ ওয়াদ দয়ীফাহ খন্ড ২, নং ২৬২
[৩] তিরমিযী হাদীস সহীহ। LINK
No comments:
Post a Comment