আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল,আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা।
প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।” [3]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“আল্লাহ তা‘আলা মাখলুককে সৃষ্টি করেন।
মাখলুককে সৃষ্টি করার কাজ সম্পন্ন করার পর "আত্মীয়তার সম্পর্ক" বলল, এ হল (আল্লাহর কাছে) আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, তুমি কি খুশি হবে না, আমি সম্পর্ক রাখি যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখে এবং আমি সম্পর্ক কর্তন করি যে তোমার সাথে সম্পর্ক কর্তন করে। সে বলল, হ্যাঁ হে রব! তিনি বললেন, তোমাকে তা দেয়া হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি চাও তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর-
“তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টি সমূহকে অন্ধ করেন ।” ------------ [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২২, ২৩]
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻃﻊ ﺍﻟﺮﺣﻢ »
“আল্লাহ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট কারীকে অভিশাপ করেন।” [5]
-আলেমগণ বলেন, ‘আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষার মূল কথা হচ্ছে, মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা’।- আল্লামা কুরতবী রহ. বলেন, ‘রাহেম বা সম্পর্ক বজায় রাখা’ এর-সম্পর্ক দু ধরনের হয়ে থাকে। এক-সাধারণ সম্পর্ক, দুই-বিশেষ সম্পর্ক”। -সাধারণ সম্পর্ক: ব্যাপক ও বিস্তৃত: আর এটি হল, দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সাথে ঈমানী বন্ধনের কারণে, তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখা, ঈমানদারদের মহব্বত করা, তাদেরসহযোগিতা করা, তাদের কল্যাণে কাজ করা, তাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজকে তাদের
থেকে প্রতিহত করা, তাদের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তাদের লেন-দেন ও যাবতীয়
ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের হকগুলো আদায় করা। যেমন, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া, তাদের হক সমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা, তাদের গোসল দেওয়া, তাদের উপর জানাযার সালাত আদায় করা, দাফন-কাফন ইত্যাদিতে শরিক হওয়া। বিশেষ সম্পর্ক: আর তা হল, মাতা-পিতা উভয় দিক থেকে নিকটাত্মীয়তার-সম্পর্ক রক্ষা করা। সুতরাং তাদের হক্কসমূহ, তাদের বিশেষ অধিকারসমূহ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব আদায় করা সন্তানের উপর ওয়াজিব। যেমন, মাতা- পিতার খরচ বহন করা, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, প্রয়োজনের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো থেকে বেখবর না থাকা ইত্যাদি। আর যখন বহু আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়, তখন যেটি নিকট হওয়ার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবে সেটি, তারপর যেটি তুলনামূলক কাছে সেটি প্রদান করবে।
আল্লামা ইবনু আবি জামরাহ্ বলেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময়
মালামাল বা ধন-সম্পদ দ্বারা হয়, প্রয়োজনের সময় সাহায্য করা দ্বারা হয়, ক্ষতিকে প্রতিহত
করা দ্বারা হয়, মানুষের সাথে হাসি-খুশি ব্যবহার দ্বারা হয়, দো‘আ করা দ্বারা হয়, সাধ্য
অনুযায়ী কারও কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারা হয়, সাধ্য ও সামর্থ্য
অনুযায়ী মানুষকে ক্ষতি হতে বাঁচানো দ্বারা এবং তাদের উপকার করা দ্বারা হয়। আর আত্মীয়তার-
সম্পর্ক বজায় রাখা তখন কর্তব্য হয়, যখন আত্মীয়গণ ঈমানদার হয়ে থাকে। আর
যদি ঈমানদার না হয়ে কাফের অথবা ফাজের হয়, তখন আল্লাহ্র সন্তুষ্টির তাদের সাথে সম্পর্ক
ছিন্ন করাই হল সম্পর্ক বজায় রাখা। তবে শর্ত হল, তাদের নসিহত করতে হবে ও জানাতে হবে, তারা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনে এবং এ অবস্থার উপর অটল থাকে, তাহলে তারা সত্য থেকে অনেক দূরে সরে যাবে এবং তাদের পিছনে পড়ে থাকতে হবে। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে তারা যাতে, ঈমান গ্রহণ করে তার জন্য দোয়া করা দ্বারা তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা যায়”।-
রেফারেন্স,
[3] এর তাখরীজ গত হাদীসের আলোচনায় এসেছে।
[4] বুখারী, ৪৮৩০; মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৪। [সম্পাদক]
[5] হাদীসটি এ শব্দে কোথাও পাই নি। [সম্পাদক] LINK
No comments:
Post a Comment