Saturday, March 21, 2015

আল্লাহ তা’য়ালা সম্পর্কে আকিদা

Source LINK 
আল্লাহ এমন এক জাত বা সত্ত্বা যিনি (واجب الوجود) ওয়াজিবুল অজুদ এবং যাবতীয় (صفات كمالية) সিফাতে কামালিয়া তার মধ্যে সদা সর্বণ বিদ্যমান রয়েছে।

Almighty

Indian Muslims

Power of God

‘ওয়াজিবুল অজুদ’ এমন এক বিরাট অস্তিত্বÑ যার হওয়া নিতান্ত দরকার এবং না হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আল্লাহ তা’য়ালা ওয়াজিবুল অজুদ তথা অনাদি, অনন্ত, যার শুরুও নেই, শেষও নেই, তিনি অয়, অব্যয় এবং আপনা হতেই বিরাজমান। তিনি আপন অস্তিত্ব রার্থে কারও সাহায্যপ্রার্থী নন। ইসলামী আকাইদে (واجب الوجود) ওয়াজিবুল অজুদ একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
(صفات كمالية) সিফাতে কামালিয়ার অর্থ- পূর্ণাঙ্গ গুণরাজি।
ইহা প্রতিপন্ন হয়েছে যে, একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্বই ওয়াজিবুল অজুদ, তিনিই এই বিশ্বকে عدم কিছু নয় থেকে মওজুদ করেছেন।
আল্লাহ এক, তাঁর জাত বা সত্ত্বা, সিফাত বা গুণাবলী, কার্যাবলী, হুকুমসমূহ ও নামসমূহের মধ্যে কোন শরীক নেই। (لاشريك له)
আল্লাহ তায়ালা কালামেপাকে নিজেই এরশাদ করেছেন ليس كمثله شئ অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা কোন বস্তুর মিসাল বা তুল্য নন।
ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ভাষ্য
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
انه واحد لاشريك له فرد لامثل له صمد لاضدله منفرد لاندله وانه قديم لااول له ازلى لابدايةله مستمر الوجود لااخر له ابدى لانهاية له قيوم لاانقطاع له دائم لا انصرام له لم يزل ولايزال موصوف نبعوث الجلال لايقضى عليه بالانقضاء والانفصال بتصرم الاماد (اى لايقضى عليه بانقضاء تصرم الاماد) وانقراض الاجال بل هو الاول والاخرو والظاهر والباطن-
অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) তাঁর অস্তিত্বে অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি একক, তাঁর কোন সাদৃশ্য নেই, তিনি অভাবশূন্য, তাঁর কোন প্রতিদ্বন্দী নেই, তিনি সর্বেসর্বা, তাঁর কোন অংশীদার নেই, তিনি অনাদি ও অসীম, সর্বণ বিরাজমান, তাঁর কোন বিরাম নেই, তিনি অনন্তকাল স্থায়ী, তাঁর কোন শেষ নেই, তিনি গৌরবের গুণে সকল সময়ই গুণান্বিত ছিলেন, আছেন ও থাকবেন, সময়ের অতীতেও তাঁর শেষ নেই। তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গুপ্ত এবং সর্ব বিষয়ে তিনি মহাজ্ঞানী।
তারপর ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত কিতাবের ৫৩ পৃষ্ঠায় আরো লিখেন-
وانه ليس بجسم مصور ولاجوهر محدود مقدر انه لايماثل الاجسام لافى التقدير ولافى قبول الانقسام وانه ليس بجوهر ولاتحله الجوهر ولايعرض ولاتحله الاقراض بل لايماثل موجودا ولايمثلثه موجود ليس كمثله شئ ولاهو مثل شئ وانه لايحده المقدار ولا تحويه الاقطار ولاتحيط به الجهات ولا تكشفه الارضون ولاالسموات وانه مستو على العرش على الوجه الذى قاله وبالمعنى الذى اراده استواء منزه عن المماسة والاستقرار والتمكن والحلول والانتقال لايحمله العرش بل العرش وحملته محمولون بلطف قدرته ومقهورون فى قبضته-
ভাবার্থ: আল্লাহ অশরীরী নিরাকার, পরিমাণ শূণ্য, সাদ্রশ্যহীন, তকদীরহীন অবিভাজ্য, অণু-পরমাণুশূণ্য, তাঁর দৈর্ঘ বা প্রস্থ নেই, কোন জিনিস দ্বারা তাঁর দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় না, তিনি কোন জিনিসের তুল্য নন, তাঁর ন্যায় আর কিছুই নেই। তিনি কোন জিনিসের ন্যায় নন। তিনি পরিমাণের ভেতর সীমাবদ্ধ নন, কোন স্থানের ভেতর তিনি নিবদ্ধ নন, কোন দিক তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না।
আসমান ও জমিন তাঁকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। তিনি পরিশ্রম, বিশ্রাম, স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে মুক্ত।
তিনি আরশের সম্মুখে অবস্থিত, যার সম্মন্ধে আল্লাহ নিজেই বলেছেন- استوى على العرش আর ইসতাওয়ার অর্থ হচ্ছে পরিশ্রম, বিশ্রাম, স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে তিনি (আল্লাহ) মুক্ত।
আরশ তাঁকে বহন করে না (অর্থাৎ আল্লাহ আরশে বসতে পারেন না, কারণ আল্লাহ নিরাকার, অশরীরী) বরং আরশ ও তার বহনকারী (ফেরেশত)কে আল্লাহর কদরতের করুণা বহন করে আসছে। সবকিছুই আল্লাহর আয়ত্ত্বাধীন।
তারপর তিনি বলেন-
وهو الان على ماعليه كان وانه بائن عن خلقه بصفاته ليس فى ذاته-
অর্থাৎ ‘তিনি (আল্লাহ) পূর্বে যেরূপ ছিলেন, এখনও তিনি সেরূপই আছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির নিকট গুণ দ্বারা প্রকাশ, অস্তিত্ব বা জাত দ্বারা নহে।
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন’ নামক কিতারেব ১ম জিলদের ৫৪ পৃষ্ঠায় আরো বলেন-
يرا من غير حدقة واجفان ويسمع من غير ضمخة واذان كمايعلم بغير قلب ويبطش بغير جارخة ويخلق بغير الة اذلاتشبه صفاته صفات الخلق كمالاتشبه ذاته ذات الخلق-
অর্থাৎ ‘আল্লাহপাক চ ব্যতীত দেখেন, কর্ণ ব্যতীত শুনেন, দিল ব্যতীত জ্ঞান রাখেন, হস্ত ব্যতীত ধরেন, যন্ত্র ব্যতীত সৃষ্টি করেন। তাঁর গুণ সৃষ্টির তুল্য নহে। যেরূপ তাঁর অস্তিত্ব, সৃষ্টির অস্তিত্বের তুল্য নন।
সারকথা হলো, আল্লাহর মহান গুণ হলো আল্লাহ কারো মুখাপেী বা মুহতাজ নন, الله الصمد আল্লাহ হলেন সমদ বা বেনিয়াজ। অর্থাৎ আল্লাহর দেখতে চোখের প্রয়োজন নেই, শুনতে কানের প্রয়োজন নেই, জ্ঞান রাখতে দিলের প্রয়োজন নেই, ধরতে হাতের প্রয়োজন নেই।
আল্লামা শেখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী এর ভাষ্য-
আল্লামা শেখ আব্দুল হক্ব মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাকমীলুল ঈমান’ নামক কিতাবে আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেন-
وليس مجسم ولاجوهر ولاعرض ولامصور ولامركب ولامعدود ولامحدود ولافى جهة ولافى مكان ولافى زمان-
অর্থাৎ ‘তিনি (আল্লাহ) দেহবিশিষ্ট নন, তিনি না জওহার না আরজ, তিনি আকারবিশিষ্ট নন, তিনি মুরাক্বাব নন, (তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই)
সংখ্যা ও আধিক্যতাবিশিষ্ট নন, পরিমাণশূন্য নন, তিনি দিকশূন্য, তিনি কোন স্থানে অবস্থান করেন না, এবং তাঁর উপর কোন সময় বহে না। অর্থাৎ তিনি নিরাকার,
জমান মকান ও দিক থেকে তিনি পবিত্র তারপর তিনি উক্ত কিতাবে আরো লিখেন-
لامثل له ولاشبه ولاضد ولا ندله ولاظهر ولامعين
অর্থ: তিনি উপমাহীন, রূপকহীন, তাঁর সমতূল্য কেউ নেই, তাঁর সমক কেউ নেই, তাঁর সাহায্যকারী ও সহযোগী কেউ নেই, অর্থাৎ তাঁর সাহায্য সহযোগীতার কোন প্রয়োজন নেই তিনি হলেন সমদ বা কারো মুখাপেী নন।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি কোন বস্তুর মত নন, কোন বস্তু ও তার মত নয়, গোটা আলম তথা আল্লাহ ছাড়া যা কিছু আছে সবই হাদেস অর্থাৎ ধ্বংসশীল।
যখন এ সব কিছুই ছিল না তিনি তখনও ছিলেন আবার যখন কোন কিছুই থাকবে না তিনি তখনও থাকবেন। তিনি একাই নিজের কুদরত দ্বারা সম্পূর্ণ ‘নেই’ হতে সব কিছু সৃজন করেছেন, তথা অস্তিত্ব দান করেছেন, তিনিই হলেন আল্লাহ।
তিনি এক, একক ও অদ্বিতীয়, অনাদি, অবিনশ্বর, শাশ্বত ও চিরঞ্জীব, সর্বময় মতার অধিকারী, সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা ও সর্বদষ্টা এবং স্বাধীন ও কার্যকার ইচ্ছাশক্তির মালিক।
তিনি عرض (আরজ) তথা এমন বস্তু নন, যা অন্যের মাধ্যম ছাড়া স্থিতিশীল হতে পারে না। যথা- রঙ, গন্ধ, স্বাদ, তাপ, শীতলতা, আদ্রতা ও শুষ্কতা ইত্যাদি।
তিনি জিসিম তথা দেহবিশিষ্ট নন। কেন না দেহ বহু অবিভাজ্য ুদ্র ুদ্র অংশ এবং স্থান দখলকারী। অথচ এ সবই নশ্বর সৃষ্টিকোলের বৈশিষ্ট।
তিনি মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর আকার আকৃতিবিশিষ্টও নন। কেন না ইহা (আকৃতি) দেহের বৈশিষ্ট, যাহা দেহের প্রান্তসীমা ও পরিধি তথা দৈর্ঘ, প্রস্থ ও বেধ দ্বারা অর্জিত অবস্থা তথা আয়তন ও পরিমাণ হতে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তিনি প্রান্ত, সীমা ও পরিধিবিশিষ্ট নন। অর্থাৎ তিনি সসীম তথা পরিমাণযোগ্য নন। বরং তিনি আদি, অন্ত, মধ্যহীন, তিনি অনন্ত, অসীম।
তিনি সংখ্যা ও আধিক্যতাবিশিষ্ট নন। অর্থাৎ তিনি গণনা ও পরিসংখ্যানযোগ্য নন। তিনি অংশ ও আংশিকতামুক্ত। তাঁর জাত বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডে ও অংশে বিভক্ত ও বিভাজ্য হয় না।
বহু পৃথক পৃথক ও স্বতন্ত্র অংশে মিলিত হয়ে তাঁর জাত গড়ে উঠেনি। কেন না যার অংশ থাকে এবং যা বহু বিচ্ছিন্ন অংশ দ্বারা সংযোজিত, উহার অস্তিত্ব লাভের েেত্র ঐ সব অংশের প্রতি মুখাপেতিা অপরিহার্য। আর এই মুখাপেতিা আল্লাহর অনিবার্য সত্বার পরিপন্থী।
তাঁর উপর কোন সময় বহে না। তাঁর সাথে কোন বস্তুর সাদৃশ্য নেই। তাঁর ইলম ও কুদরতের ববির্ভূত কোন বস্তু নেই। তাঁর জাতের মধ্যে অন্য কোন বস্তু স্থান পায় না এবং পেতে পারে না। তিনি কোন বস্তুতে প্রবেশ করে না এবং তাঁর মধ্যেও কোন বস্তু প্রবেশ করে না এবং করতেও পারে না এবং তিনি কোন বস্তুর সাথে এক হয়ে যায় না।
তিনি অনন্ত ও অসীম। কেন না সসীম হওয়া পরিমাণ ও পরিসংখ্যানযোগ্য বস্তুর বৈশিষ্ট। তিনি অংশ ও আংশিকতামুক্ত।
তিনি কোন বস্তুর শ্রেণীভুক্ত নন। তিনি দেহের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুণাবলী যথা- রং, স্বাদ, গন্ধ, তাপ, শীতলতা, আদ্রতা, শুষ্কাতা ইত্যাদি হতে মহাপবিত্র। কেন না এসবই দেহ তথা সংযোজিত ও সংমিশ্রিত বস্তুর গুণ। তিনি কোন স্থানে অবস্থান করে না।

No comments:

Post a Comment