Friday, December 11, 2015

অসীয়ত বাধ্যতামূলক ওয়াজিব

Source LINK 


▒▒░░▓▓▓ ইনসাফ, অসীয়ত এবং মৃত্যুর পূর্বে সম্পদ বন্টন ▓▓▓░░▒▒
▒▒░░▓▓▓ ইনসাফ না করলে পিতা-মাতাও যালিম হবে ▓▓▓░░▒▒
▒▒░░▓▓▓ অসীয়ত বাধ্যতামূলক ওয়াজিব ▓▓▓░░▒▒
▒▒░░▓▓▓ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ▓▓▓░░▒▒

আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারন, যে ইনসাফ করে না বা যার ভিতর ইনসাফ নাই সে যালিম। আর মহান আল্লাহ যালিমদের বরদাশত করেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোন পরিবারের কর্তা ব্যক্তি- যেমনঃ পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের প্রতি সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে দুনিয়াবী স্বার্থে বৈষম্য করে থাকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় কোন সন্তান বা সেই সন্তানের স্ত্রী যাতে তাদেরকে দেখাশুনা করে। এবং এ কারনে, কোন সন্তানকে বা সেই সন্তানের স্ত্রীকে বিশেষভাবে সম্পত্তি অগ্রিম বা আগে ভাগেই দান বা হেবা করে থাকে। এই কাজ নিঃসন্দেহে কূরআন বিরোধী। মৃত্যুর পূর্বে অসমভাবে সম্পদ বা সম্পত্তি বন্টন বৈধ নয়। কারন,
আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) বিধানের বাইরে যারাই কোন ফায়সালা করে তারাই যালিম।
অনেকেই আছে যারা মৃত্যূর আগেই তাদের দেখাশুনার জন্য তাদের কোন সন্তানকে বা তাদের কোন পুত্রবধুকে কিছু সম্পদ অন্যান্যদেরকে বঞ্চিত করে দান করে যায়।
তারা মনে করে এটা তাদের জন্য পূন্যের কাজ। সম্পদ দান করে এই কারনে যে, বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরকে দেখাশূনা করবে।
এ ধরনের কাজ কি আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) বিধানের বাইরে নয়?
আমাদের সমাজে এমন ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না- তারাই যালিম (সূরা মায়েদাহঃ আয়াতঃ ৫:৪৫)।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
“তোমরা ইনসাফ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ কারীদেরকে ভালবাসেন।”
***সূরা হুজুরাতঃ আয়াতঃ ৪৯:৯।
ইনসাফ না করা হলো ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। কারন,
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত। "
***সূরা মায়েদাহঃ আয়াতঃ ৫:৮।
আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায় সঙ্গত সাক্ষ্যদান করাও ইনসাফ; তাতে যদি নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের ক্ষতিও হয়। কারন,
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। "
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৩৫।
জীবিত অবস্থায় সম্পদ বন্টন করলে তা মূলতঃ দান বা হেবা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে সকলকে সমান সমান করে দেয়া যাবে। তবে, বর্তমানে যেহেতু মৃত্যুর পরের বন্টন পূর্বে করে দেয়া হয়, তাই মিরাস অনুযায়ী বন্টন করাই শ্রেয়।
জীবিত অবস্থায় ওয়ারিসরা মালিকের সম্পদের মিরাস হবে না। মৃত্যূর পর ওয়ারিস হবে। মৃত্যুর পূর্বে সম্পত্তি বণ্টন করা বৈধ নয়। কারণ ওয়ারিসরা মালিকের মৃত্যুর পূর্বে সম্পদের হকদার হয় না। যেমন,
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।"
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১২।
মৃত্যুর পর শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী যার যতটুকু পাওনা, সে অনুযায়ী প্রত্যেক ওয়ারিস নিজ নিজ হক বুঝে নিবে। আল্লাহর বন্টনে বিরোধিতা করলে তার পরিণাম চিরস্থায়ী জাহান্নাম। যেমন,
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।"
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৪।
কুরআনের মিরাস অনুসারে বন্টন করতে হবে। কোন ফাতওয়া দিয়ে বন্টন করা চলবে না। যেমন,
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত।"
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৭৬।
তাছাড়া পিতার আগে সন্তান মারা গেলে বন্টনের নিয়ম পাল্টে যাবে। আর মৃত্যু কার আগে আসবে সেটা কেউ জানে না।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।"
***সূরা লোকমানঃ আয়াতঃ ৩১:৩৪।
▒▒░░▓▓▓ অসীয়ত বাধ্যতামূলক ওয়াজিব ▓▓▓░░▒▒
অসীয়ত বিষয়ে প্রায় ১৪৫০ বছরের পুরাণো কুরআনের অমোঘ বিধান। মৃত্যুর আগে স্ব-জ্ঞানে সম্পত্তি বন্টন করে যাওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক, ওয়াজিব। অন্যথায় তাঁর ক্ষমা নেই! জান্নাতের আশাও নেই!
মহান আল্লাহ ঘোষনা করেছেনঃ
"তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য অসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরী। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শোনেন ও জানেন। যদি কেউ অসীয়ত শোনার পর তাতে কোন রকম পরিবর্তন সাধন করে, তবে যারা পরিবর্তন করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে। যদি কেউ ওসীয়তকারীর পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের অথবা কোন অপরাধমূলক সিদ্ধান্তের এবং তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার কোন গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।"
অথবা এমন অর্থে,
"তোমাদের মধ্যে যখন কারো মৃত্যু উপসি'ত হয় আর তার যদি ধনসম্পত্তি থাকে, তবে পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের জন্য অছীয়ত করার বিধান দেওয়া হলো। মুত্তাকীদের জন্য ইহা অবশ্য পালনীয়। উহা জানার পরও যদি কেউ উহা অস্বীকার/পরিবর্তন করে তবে সে পাপী হবে-; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। তবে যদি কোন অছিয়তকারীর পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায়ের আশংকা করে তবে নিরপেক্ষ মীমাংশায় দোষ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।"
***সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:১৮০-১৮২।
অসীয়তের বিধান এতীমদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য উপরোক্ত বিধি-বিধান ব্যতীত আর একটি উত্তম ব্যবস্থা অসীয়তের নামে বিদ্যমান রয়েছে। যারা উত্তরাধিকারী হয় তাদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়।
কেননা হাদীসে বলা হয়েছে, আর যারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশীদার হয় না তাদেরকে উত্তরাধিকারীর সমপরিমান অংশের অধিক পরিমান অসীয়ত বিধির মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে। কেননা উত্তরাধিকার বন্টন ব্যবস্থা শরীয়ত কতৃক নির্ধারিত হওয়ার কারণে নিকটতম আত্মীয় ওয়ারিশদের জন্য অসীয়তের বিধান কার্যতঃ রহিত করা হলেও
যারা ওয়ারিশ নয় তাদের জন্য সর্বসম্মতভাবেই অসীয়তের মাধ্যমে সাহায্য করা বাধ্যতামূলক ওয়াজিব।
মূল অসীয়ত বিষয়ে একটি হাদিসঃ
তালহা ইব্‌নু মুসাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
আমি ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবী আওফা (রাদিঃ) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি অসীয়ত করেছিলেন?
তিনি বললেনঃ
না।
আমি বললামঃ
তাহলে কিভাবে লোকদের উপর অসীয়ত ফরয করা হলো, কিংবা অসীয়তের নির্দেশ দেয়া হলো?
তিনি বললেনঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র কিতাব অনুসারে আমল করার জন্য অসীয়ত করেছেন।
***সহীহ বূখারীঃ ২৭৪০; ৫৫/১. অধ্যায়ঃ অসীয়ত প্রসঙ্গেে। [www.ihadis.com:8080/bukhari/55/2740]।
এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত প্রসঙ্গেঃ
হাসান বস্‌রী (রহঃ) বলেছেনঃ
যিম্মির জন্য এক তৃতীয়াংশের বেশি অসীয়ত করা বৈধ নয়।
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাদিঃ) বলেছেনঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন আল্লাহ্‌র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যিম্মিদের মধ্যে ফয়সালা করেন।
আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেনঃ
"তাদের মধ্যে ফয়সালা কর, আল্লাহ্‌র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী।"
***সূরা মায়িদাহঃ আয়াতঃ ৫:৪৯।
আমির ইব্‌নু সা‘দ (রহঃ) -এর পিতা সা‘দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্‌কাস (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে আসেন।
আমি বললামঃ
'হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেন। [অর্থাৎ যেখান হতে হিজরত করে এসেছি সেখানে যেন আমার মৃত্যু না হয়]।
তিনি বললেনঃ
‘আশা করি আল্লাহ্‌ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার দ্বারা লোকদের উপকৃত করবেন।’
আমি বললামঃ
‘আমি অসীয়ত করতে চাই। আমারতো একটি মাত্র কন্যা রয়েছে।’
আমি আরো বললামঃ
‘আমি অর্ধেক অসীয়ত করতে চাই।’
তিনি বললেনঃ
অর্ধেক অনেক অধিক।
আমি বললামঃ
এক তৃতীয়াংশ।
তিনি বললেনঃ
আচ্ছা এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও অধিক বা তিনি বলেছেন বিরাট।
সা‘দ (রাদিঃ) বলেছেনঃ
অতঃপর লোকেরা এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করতে লাগল। আর তা-ই তাদের জন্য জায়েয হয়ে গেল।
***সহীহ বূখারীঃ ২৭৪৪; ৫৫/৩, অধ্যায়ঃ অসীয়ত প্রসঙ্গেে। [www.ihadis.com:8080/bukhari/55/2740]।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসীয়ত করছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে, আলাহ তাআলা প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।
***বূখারীঃ ৫৫৫৫।
কারন, প্রতিবেশী সম্পর্কে-
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। "
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৩৬।
উত্তরাধিকারের অসীয়ত করার সময় সাক্ষী হিসেবে কুরআনে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"হে ঈমানদারগন! তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুর দুয়ারে পৌছায় তখন অসীয়ত করতে হলে তোমাদের মধ্য থেকে সাক্ষী রেখো। তোমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যাক্তি অথবা বাইরের, যখন তোমরা এ পৃথিবীর বুকে (কোথাও) সফরে আছো, আর এমন সময় মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছে।"
***সূরা মায়েদাঃ আয়াতঃ ৫:১০৬।
উল্লেখ্য যে, কেউ মৃত্যুর দুয়ারে পৌছালে অসীয়ত করতে হবে এবং অসীয়তকারীর মৃত্যূর পরে তাহা কার্যকরী হবে।
▒▒░░▓▓▓ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ▓▓▓░░▒▒
ইসলাম সর্ব ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছে। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিধান অনুসরণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসারীদের তাগিদ দিয়েছেন। কারণ ইসলামী বিধান হলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিধান।
নোমান ইবনে বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমার পিতা আমাকে কিছু দান করলে আমার মা আমরাহ্ বিনতে রাওয়াহা বললেন, আপনি যতক্ষণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী না বানাবেন ততক্ষণ আমি এতে তুষ্ট নই। অতএব, আমার পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বললেনঃ
আমি আমরাহ্ বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার এই সন্তানকে একটা জিনিস দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আমরাহ্ আমাকে বলেছেন, আমি যেন আপনাকে সাক্ষী রাখি। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ
তুমি কি তোমার সব সন্তানকে এর অনুরূপ দান করেছ?
তিনি বলেনঃ
না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সব সন্তানের প্রতি ইনসাফ কর।
নোমান (রহঃ) বলেনঃ
অতঃপর আমার পিতা ফিরে এলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন।
হাদিসের অপর বর্ণনায় আছে যেঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কোন যূলুমের সাক্ষী হতে পারি না।
***বুখারী ও মুসলিম থেকে মিশকাতে বর্নিত।
ইসলাম পারিবারিক বন্ধনের পাশাপাশি আত্মীয়তার বন্ধনকে জোরদার করার পক্ষে। আত্মীয়দের প্রতি বিশেষ মনোযোগ বা মহব্বতকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন।
হারিসের কন্যা মাইমুনা (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ক্রীতদাসীকে আজাদ করলেন এবং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন।
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ
তুমি যদি তা তোমার মামাদের দান করতে তবে অধিক সওয়াব হতো।
***বুখারী ও মুসলিম থেকে মিশকাতে বর্নিত।
দান-খয়রাত একটি উত্তম ইবাদত। কিন্তু আপন আত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। অর্থাৎ দান-খয়রাতের জন্য একটি সওয়াব এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্য আরেকটি সওয়াব।
উপরোক্ত দুটি হাদিসের আলোকে দৃঢ় পারিবারিক ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের যেমন কর্তব্য তেমনি আত্মীয়দের প্রতি মহব্বতের সম্পর্ক নিশ্চিত করাও কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
অসীয়ত

1 comment:

  1. Islamic inheritance jurisprudence ...
    অসীয়ত বাধ্যতামূলক ওয়াজিব

    ReplyDelete