Friday, July 3, 2015

সারা বিশ্বে একইসাথে চাঁদ দেখার পক্ষে বিভিন্ন আলেমদের বক্তব্য

Source LINK   LINK2
সারা বিশ্বে একইসাথে চাঁদ দেখার পক্ষে বিভিন্ন আলেমদের বক্তব্য ....

রাসূল (সা)-এর জীবদ্দশায় মুসলিমরা বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা সত্ত্বেও একই দিনে সিয়াম পালন শুরু করতেন এবং একইদিনে তা বন্ধও করতেন। এই বিষয়টি আমাদের জন্য আরেকটি শরঈ প্রমাণ যে, যেকোনো জায়গায় নতুন চাঁদ দেখা গেলেই এবং তা যদি একজন মুসলিমের সাক্ষ্যেও ভিত্তিতেও হয়, সেক্ষেত্রে সমস্ত মুসলিমরা একইদিনে সিয়াম পালন শুরু করতে এবং একইদিনে সিয়াম পালন বন্ধ করতে বাধ্য। এবং নিম্নোক্ত হাদীসগুলো সেটাই প্রমাণ করে:
একবার মহানবী (সা) কিংবা তার সাহাবীরা কেউই রমজানের চাঁদ দেখেননি। সেই প্রেক্ষিতে আবু দাউদ শরীফে ইবন আব্বাস হতে বর্ণিত আছে,
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلَالَ قَالَ الْحَسَنُ فِي حَدِيثِهِ يَعْنِي رَمَضَانَ فَقَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ يَا بِلَالُ أَذِّنْ فِي النَّاسِ فَلْيَصُومُوا غَدًا
"একজন বেদুইন এসে নবী (সা)-কে বললো, 'আমি চাঁদ দেখেছি।' নবী (সা) বেদুঈনটিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল?' লোকটি বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি (সা) বলেন, হে বিলাল, লোকসকলের মাঝে ঘোষণা দাও যাতে আগামীকাল তারা সিয়াম পালন করে"। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা) কেবলমাত্র একজন মুসলিমের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তার মাজমু' আল ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন,
مُخَالِفٌ لِلْعَقْلِ وَالشَّرْعِ
"এ বিষয়টি (চাঁদ দেখাকে কোনো একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বা দেশের মধ্যে সীমিত করাটা) যুক্তি এবং শরীয়ত উভয়েরই পরিপন্থি।"
'ফতওয়া-ই আলমগিরি'-তে বলা হয়েছে,
لَوْ رَأَى أَهْلُ مَغْرِبٍ هِلَالَ رَمَضَانَ يَجِبُ الصَّوْمُ عَلَى أَهْلِ مَشْرِقٍ
"পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তের অধিবাসীদের কেউ রমজানের চাঁদ দেখলে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের ওপরও ওই রোজা ফরজ হবে।"
সারা বিশ্বে একইসাথে চাঁদ দেখার পক্ষে বিভিন্ন আলেমদের বক্তব্য
======================================
ইমাম আন-নাসাফী (মৃ: ৭০১ হি) বলেন:
وَيَلْزَمُ أَهْلَ الْمَشْرِقِ بِرُؤْيَةِ أَهْلِ الْمَغْرِبِ
পূর্বের বাসিন্দাদের (চাঁদ) দেখা পশ্চিমের বাসিন্দাদের উপর আরোপিত হবে। [বাহরুর রায়েক শরহু কানযিদ দাকায়েক, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৮০]
ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা গ্রন্থের বলা হচ্ছে-
يشمل كل من بلغه رؤية الهلال من اى بلد او اقليم من غير تحديد مسافة اصلا
অর্থাৎ নব চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ যতটুকু পৌঁছবে ততটুকু তার আওতাভূক্ত হবে। তা কিছুতেই দূরত্বের কারণে কোন দেশ, মহাদেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
[ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা, খন্ড-২৫, পৃঃ-১০৭] অথবা [তামামুল মিন্নাহ ১/৩৯৮]
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও গবেষক আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ:
"এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য সকল শহর বাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে। ঐ শহরগুলোর সঙ্গে চাঁদ দেখা শহরের যত দুরত্বই হোকনা কেন। এমনকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরয হবে।"
[বেহেশতী- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০]
চার মাযহাবের সমন্বিত ফিকহ গ্রন্থ আল ফিকহ আলা মাযাহাবিল আরবা’য়া নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-
"পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে। চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই। তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে। তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি,ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে"
(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩) অথবা (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)
“According to the Hanafia the differences in the horizon will not be taken into consideration, to the extent that if the people of the west sight the moon, it becomes mandatory on the people of the east to follow it, given that the information is verified and authenticated. (Fatawa Darul-Uloom-Deoband vol. 6, pg. 251)
পবিত্র বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল বারী”-তে আল্লামা ইবনু হাজার আল-আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন-
"রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী فلاتصوموا حتى تروه [রোজা রেখ না যতক্ষন না (নতুন চাঁদ) দেখছ] এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত। আর অন্যদের মতে দু’জনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন “যতক্ষণ না তাকে দেখবে” এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে। যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না।"
[ফাতহুল বারী ফি শরহে ছহীহীল বুখারী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৪]
ইমাম নববীর শরহে মুসলিমে এসেছে:
"এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর।” এর অর্থ হলো কিছু মুসলমানের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবেনা যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দু'জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে রোযার ক্ষেত্রে একজন সৎ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট। আর অধিকাংশ ফকীহগণের মতে শাওয়ালের নতুন চাঁদ প্রমাণের জন্য একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবেনা।"
[শরহুন নববী আলা মুসলিম]
চাঁদ দেখার ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । বরং প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করে, একই দিনে একই তারিখে আমল করতে হবে । এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত । মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা । তাদের দলীল হচ্ছে আয়াত ও হাদীসে চাঁদ দেখার সম্বোধন সকলের জন্য আম বা সার্বজনীন যা নামাজের ওয়াক্তের সম্বোধন থেকে আলাদা-
[ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-১০৫] অথবা [ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-৪৩২]
"ফিকহের প্রতিষ্ঠিত বর্ণনানুযায়ী চাঁদ ঊদয়ের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। ফাতওয়া-ই কাযী খানের ফাতওয়াও অনুরুপ । ফকীহ আবু লাইছও এমনটাই বলেছেন । শামছুল আইম্মা হোলওয়ানী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পাশ্চাত্যবাসী রমযানের চাঁদ দেখে তবে সে দেখার দ্বারা প্রাচ্য বাসীর জন্য রোযা ওয়াজিব হবে। এমনটাই আছে খুলাছা নামক কিতাবে-"
[ফাতওয়া-ই- আলমগিরী, খন্ড-১, পৃঃ-১৯৮] অথবা [ফাতওয়া-ই- আলমগিরী, খন্ড-৫, পৃঃ-২১৬]
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা রশীদ আহমদ গাংগুহী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ-
"ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে রোযা রাখা ও ঈদ করার ব্যাপারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। প্রাচ্যবাসীর দেখা দ্বারাই পাশ্চ্যাত্যবাসীর উপর আমল জরুরী হবে।"
[ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭]
বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাট হাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান সাহেব তার রচিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ তানযীমুল আশ্‌তাতে। যার ভাষ্য নিম্নে উদ্ধৃত হল-
অর্থাৎ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গ্রহণীয় নয়। শামী কিতাবে এমনটাই রয়েছে। এটাই আমাদের (হানাফীদের) রায়। মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা। অতএব, কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সর্বত্রই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে।
[তানযীমুল আশ্‌তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১]
"Wherever the sighting is confirmed, however far off it may be, even if it were to be thousands of miles; the people of this place will have to abide by that." [Fatawa Dar ul Uloom Deoband, Vol. 6 page 380, Urdu edition]
উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল উলুম দেওবন্দ”-এর গ্রান্ড মুফতি আযিযুর রহমান সাহেব ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ-এ লিখেছেন-
অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহনীয় নয়। যদি কোন স্থানে শা’বান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখা যায় এবং শরয়ীভাবে তা প্রমাণিত হয় তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সঙ্গে ঈদ করবে এবং প্রথমের একটি রোযা কাযা করবে - [ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮]

সম্পুর্ন জানতে- http://returnofislam.blogspot.com/2013/07/blog-post_8.html
 Dua on New Moon Sight


2 comments:

  1. বুঝলাম আমাদের পূর্ববতী ইমামগণ এসব বক্তব্য প্রদান করে গেছেন। কিন্তু আমাদেরকে এটাই খেয়াল রাখতে হবে যে, বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতিতে পরেছি তারা কিন্তু সে পরিস্থিতিতে পড়েন না। তাই স্বাভাবিকভাবে তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ীই ফতুয়া দিয়েছিলেন। আর তখনকার সময়ে এর বিপরীত হওয়ারও কথা ছিল না। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আর তা হলো, যদি একই রোযা শুরু হওয়ার কথা ধরেই নেয়া হয়, তাহলে রাসূল (সা) ও সাহাবীদের আমল কতটুকু সঠিক ছিল। অথচ তাদের পূর্বেও তো আমেরিকায় দেখা যেত। তাই নয় নয়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. রসূল সঃ এর সময় আমেরিকাতে মুসলমান ছিলনা তাই আমেরিকার চা্ঁদ দেখা গ্রহন যোগ্য নয়৷

      Delete